ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার উপায়
সৌরজগতের গতি ও পৃথিবীর প্রকৃতি এবং সপ্ত জমিনের ভূকম্পনসহ সব নিয়মের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে মহান রাব্বুল আলামিন। এ ভূমণ্ডল ও নবভূমণ্ডলের সব শক্তিশালী কর্মকাণ্ড আল্লাহর অসীম কুদরতের নির্দশন মাত্র। তার ইচ্ছাতেই এ গতি ও পরিণতি বিন্যাসের সূত্রপাত হয়ে থাকে। যা জ্ঞানী মাত্রই বুঝতে সক্ষম।
পৃথিবীর বসবাসযোগ্য অংশে চলমান ঘটনা প্রবাহই মানুষের জন্য বিস্ময়। যার নিয়ন্ত্রণ শুধু মানুষই নয় আধুনিক বিজ্ঞানীদেরও সাধ্যের বাইরে। এমনকি প্রাকৃতিক বিস্ময়কর কর্মকাণ্ডগুলো কখন, কীভাবে হবে তার সঠিক তথ্যগুলোও মানুষের জ্ঞানের বাইরে। যা কখনও সম্ভব নয়।
মানুষের দৃষ্টি সীমার মধ্যে বিজ্ঞানের আবিষ্কার কোনো বিষয়ই পরিপূর্ণতা লাভ করেছে বলে কোনো তথ্য প্রমাণ আজও পৃথিবীতে নেই। আল্লাহর কুদরাতের কাছে বিজ্ঞানের আবিষ্কার তুলনা করার পর্যায়েও আসে না। কেননা আল্লাহ মানুষকে অতি অল্প জ্ঞান ও দূর্বল করেই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং মানুষের জীবনের ছোট-বড় যত ঘটনা, বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড, ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস, নীহারিকাপুঞ্জের বিচরণ এর সবই মানুষের জন্য সতর্ক বার্তা মাত্র। যাতে মানুষ আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ করে। সুতরাং মানুষের করণীয়সমূহ হচ্ছে :
ক. ভূমিকম্পের মতো সব বিপদ আপদের শাস্তির ভয় করা এবং আল্লাহকে স্মরণ করা
খ. অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা এবং তাঁর দিকে ফিরে আসার চেষ্টা করা
গ. দুনিয়ার এ ছোট খাটো বিপদ থেকে শিক্ষালাভ করে আখিরাতের শাস্তি থেকে নাজাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা
ঘ. আল্লাহকে ভুলে থাকার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা
ঙ. অন্যের ওপর অর্পিত বা পতিত বিপদে মনগড়া যুক্তি দাঁড় না করিয়ে আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলা
চ. সদা সর্বদা আল্লাহর সাহায্যের আশা করা; তাঁর রহমত হতে নিরাশ না হওয়া
ছ. আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়ার আশা করা
জ. আল্লাহকে ভুলে থাকার মতো সব ধরনের আমোদ-প্রমোদ থেকে ফিরে থাকা। এবং
সবচেয়ে বড় চারটি গোনাহ থেকে ফিরে থাকা। আর তা হচ্ছে -
১. আল্লাহর সাথে শরিক করা
২. আল্লাহর পাকড়াও সম্পর্কে বেপরোয়া হওয়া
৩. তাঁর ক্ষমা ও করুণা সম্পর্কে নিরাশ হওয়া
৪. তাঁর দয়া ও দান সম্পর্কে আশাহীন হওয়া। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক)
ভূমিকম্পসহ যাবতীয় দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেহ সকাল এবং সন্ধ্যা নিন্মোক্ত দুআটি পড়বে তাকে কোনো বিপদ-আপদ, বালা-মুছিবত স্পর্শ করবে না। দুআটি হলো :
বিসমিল্লাহিল লাজি লা ইয়াদূররু মাআস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামিই ওয়াহুয়া সামিয়ুল আলিম (তিরমিজি, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)।
পৃথিবীর এ সব নির্দশন থেকে তারাই উদাসীন থাকে, যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় নেই। দুনিয়ার জিন্দেগি নিয়ে যারা ব্যস্ত। এদের জন্যই কুরআন ও হাদিসে খুব পরিষ্কারভাবেই আখিরাতের ভয়াবহ চিত্র অংকিত হয়েছে। তাই আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে এ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে আল্লাহর পথে আসার আহবান ও সতর্ক করে থাকেন। যাতে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কুদরতের বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন না থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে।
সুতরাং মুমিনের কর্তব্য ও ঈমানি বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে সব ধরনের কু-স্বভাব সম্পর্কে সাবধান হওয়া এবং নিজের চিন্তা ও কর্মকে সব ধরনের নোংরামি থেকে হেফাজত রাখার চেষ্টা করা। পাশাপাশি আখিরাতমুখী জীবনধারার বৈশিষ্ট্য ঈমান, সৎ কর্মসম্পাদন, আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা,আখিরাতমুখী জীবনধারণ করা। তবেই আল্লাহ আমাদের সব ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে হেফাজত করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উক্ত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এসআইএস/আরআইপি