অসুস্থ স্বামীকে পাঁচ মাস ধরে নদীর পাড়ে রেখে দিলেন স্ত্রী!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০৫ এএম, ০৬ মার্চ ২০১৮

পরিবার পরিত্যক্ত হয়েছিলেন অনেক আগেই। জীবনধারণের জন্য যে হোটেলে রান্নার কাজ করতেন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পরে সেখান থেকেও বিতাড়িত করা হয়েছিল তাকে। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী তাকে রেখে দিয়ে যান ভারতের রামকৃষ্ণপুর গঙ্গার ঘাটে একটি সিমেন্টের বেঞ্চে।

গত পাঁচ মাস ধরে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছিলেন কৃষ্ণ যাদব নামের ওই বৃদ্ধ। অবশেষে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে পুলিশ এসে তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়। অভিযোগের সুরে ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘স্ত্রী-মেয়ে আমাকে দেখেনি। দেখলে এমন অবস্থা হতো না।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবরে বলা হয়েছে, চরম দারিদ্র প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের। ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুঁড়োয় অবস্থা। স্বামী পক্ষাঘাতে জীর্ণ। বাড়িতে ছোট মেয়ে। স্ত্রীকে পরের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে হয়েছে। উপায় না পেয়ে অভাবের তাড়নায় পক্ষাঘাতে জীর্ণ স্বামীকে পাঁচ মাস ধরে গঙ্গার ধারে গাছের তলায় রেখে দিয়েছেন স্ত্রী। পাঁচ মাস ধরে পক্ষাঘাতে জীর্ণ শরীর নিয়ে গঙ্গার ঘাটের গাছতলাই ছিল স্বামীর ঠিকানা।

মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের বৃন্দাবন চকের বাসিন্দা কৃষ্ণা যাদব (৫৫) সংসার চালাতে বাড়ি ছেড়ে গিয়ে হাওড়ার বিভিন্ন ছোটোখাটো হোটেলে একসময় রাঁধুনির কাজ করতেন। পরে হাওড়ার রামেশ্বর মালিয়া লেনের একটি হোটেলে তিনি কাজ করছিলেন। উপার্জিত আয়ের অধিকাংশটাই পাঠাচ্ছিলেন বাড়িতে। তাতেই কোনওরকমে খেয়ে পরে দিন কাটছিল স্ত্রী আর মেয়ের। প্রায় পাঁচমাস আগে হঠাৎই শরীরের বাম দিক অসাড় হতে শুরু করে কৃষ্ণার। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। স্ত্রী গৌরী অসুস্থ স্বামীকে ফিরিয়ে নিয়ে যান বাড়িতে।

সেখানে যেটুকু চিকিৎসা সম্ভব সেটুকুই জোটে। স্বামীর রোজগার বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারে টানাটানি শুরু হয়। অভাবের কারণে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। স্ত্রী গৌরী যাদব পরিচারিকার কাজ শুরু করেন। কলকাতার ভবানিপুরে একটি বাড়িতে থেকেই কাজ করছেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ স্বামীকে দেখাশোনার কেউ নেই। কিশোরী মেয়ের পক্ষে বাবার পরিচর্যা করাও সম্ভব নয়। তাই নন্দীগ্রামের দেশের বাড়ি থেকে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত স্বামীকে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাটের কাছে রেখে দিয়ে যান স্ত্রী।

এখন মাঝে মধ্যে এখানে এসে স্বামীর হাতে অল্প কিছু টাকা এবং ওষুধও কিনে দিয়ে যান। বিগত পাঁচমাস ধরে এভাবেই তার জীবন কাটছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের তৎপরতায় খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে সেখানে এসে পৌঁছায় হাওড়া সিটি পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করে তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।