রাজাকার আব্দুল লতিফ ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি


প্রকাশিত: ০৩:১৩ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৫

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক বাগেরহাটের তিন রাজাকারের মধ্যে আব্দুল লতিফ তালুকদার বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত ২৩ জুন বাগেরহাটের রাজাকার কসাই সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরামের মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছেন আদালত। যেকোনো দিন এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মামলাটি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায়ের জন্য রাখা আছে।
 
এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেসার আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আব্দুল লতিফ তালুকদার অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুপুর ১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। হাসাপাতলের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, এই তিনজনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ রয়েছে। এই সাত অভিযোগে গত বছরের ৫ নভেম্বর বিচার কার্যক্রম শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযুক্ত তিনজনই আটক আছেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কচুয়ার শাঁখারিকাঠি বাজারে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোসহ ছয়টি সুনির্দিষ্ট অপরাধ ও ৮১৯ জনকে হত্যার অভিযোগে সিরাজ মাস্টারকে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে তার চাচা শ্বশুর মৃত. মোসলেম পাইকের পরিত্যক্ত খুপরি ঘর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া, কচুয়া থানা পুলিশ ১১ জুন এই মামলার অপর পলাতক আসামি আ. লতিফ তালুকদারকে ও ১৯ জুন অপর পলাতক আসামি আকরাম হোসেন খাঁনকে রাজশাহী থেকে মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করা করে।

তাদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭১ সালের ১৩ মে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার রঞ্জিতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুট এবং অগ্নিসংযোগ। এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪০-৫০ জন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়। জেলার রামপাল থানার ডাকরার কালীমন্দিরে ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই-তিন হাজার লোক। ১৯৭১ সালের ২১ মে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৬০০-৭০০ জনকে হত্যা করা হয়।

১৯৭১ সালের ১৮ জুন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর থানার বেসরগাতী, কান্দাপাড়া এলাকায় ১৯ জন নিরীহ নিরস্ত্র লোককে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সদর থানার চুলকাঠিতে হামলা চালিয়ে ৫০টি বাড়ি লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় সাতজন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।

১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কচুয়া থানার শাঁখারিকাঠি হাটে হামলা চালিয়ে ৪২ জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। এসময় অনেক বাড়ির মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকেল আনুমানিক ৫টা পর্যন্ত কচুয়া থানা সদরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরস্ত্র পাঁচজনকে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা হয়।

এছাড়া ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার তেলিগাতিতে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদারকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।

এফএইচ/বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।