সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে অনুমতি মানে বিশেষ সুবিধা নয়


প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৫

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের জন্য সরকারের অনুমতি দরকার, তার মানে এই না যে আইনের মাধ্যমে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে। বৃহস্পতিবার বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্ধোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার আগে কাউকে গ্রেফতারে সরকারের অনুমতির বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়ন নিয়ে যে বিতর্ক তা অমূলক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১৩ জুলাই মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৫’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের পর তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

এ আইনে ‘সরকারি কর্মীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন লাগবে’ বলে মন্ত্রণালয়ের সচিব বললেও আইনমন্ত্রী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, ‘অনুমোদনের বিষয় নয়, সরকারি দায়িত্বে নিযুক্ত থাকাকালীন সময়ে কাউকে গ্রেফতারের আগে সরকারকে জানাতে হবে।’

সরকারি কর্মচারী আইনে কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনের ২ নং উপধারা মতে সরকারি দায়িত্বে নিযুক্ত থাকার সময় কাউকে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার করার জন্য ‘সরকারকে জানাতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘এটা কেন করতে হবে? ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে, যদি তাকে গ্রেফতার করার প্রয়োজন পড়ে সেটা জানলে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হবে।’

মামলার (এফআইআর) প্রাথমিক তথ্য বিবরণী প্রস্তুতির পর কোনো কর্মকর্তা গ্রেফতার হলে অবিলম্বে তাকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া করতেই এসব তথ্য সরকারকে জানানো দরকার বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মামলা করে একজন কর্মকর্তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো, সরকার জানলো না, তার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারলো না। তখন এটা সরকারেরই দুর্বলতা দেখানো হবে। সেই কারণেই আইনে এই সুযোগ রাখা হয়েছে।’

ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) সঙ্গে নতুন আইনের ব্যবধান তুলে ধরে তিনি বলেন, সিআরপিসির ১৯৭ ধারার পেছনে ঔপনিবেশিক মানসিকতা ছিল। সেখানে বলা আছে, মামলা করার পর স্যাংশন (অনুমোদন) নিতে হবে। এখানে কিন্তু এ রকম কথা নেই।

তারপর উপধারায় লেখা আছে, দুর্নীতির বিষয় হলে দুদকের আইন অগ্রাধিকার পাবে, সেটাও কিন্তু পরিষ্কার বলা আছে। তাই আমি বলবো, এটা নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে, আমার মনে হয়, তা অমূলক।

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘আইনে সবার অধিকার সমান’ তাতে বাধা পড়লো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এখানে কোন বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। আইনে কোনো কর্মকর্তার গ্রেফতার ঠেকানোর ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়নি।

‘আইনে যেটা বলা আছে, তাকে ইনফর্ম করতে হবে। তাকে জানানোর কারণ হচ্ছে, আমি যে পদক্ষেপগুলোর কথা বললাম, সেগুলোর জন্য সরকাকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’ কিন্তু আইনে ‘ইনফর্ম’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি- বলে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণের পর তিনি বলেন, অনুমোদন বলার কারণ হলো, এখানে তথ্য দিলে গ্রেফতার বন্ধ করতে পুলিশকে বলা যাবে না।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমার মনে হয় না, সরকারের পারমিশনের কথা বলা হচ্ছে। তিনি সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। তাকে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার পূর্বে জ্ঞাত করাটা আমার মনে হয় স্বাভাবিক। এখানে অনুমতির কথাটা এই আলোকেই দেখতে হবে, পারমিশনের সেন্সে নয়।’

ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে তিনি যদি কোন দোষ করেন, তাহলে প্রচলিত আইনেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেখানেও সরকার যদি শুধু জানেন, তিনি ব্যক্তিগত অপরাধ করেছেন, সরকার সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আইনমন্ত্রীর মতে, ‘এটা নিয়ে কারো বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে না, অন্য সাধারণ মানুষের অধিকার খর্বও হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদনের দরকার। তার মানে এই না যে এই আইনের মাধ্যমে কোনো কর্মকর্তাকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে। তবে কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করার ক্ষেত্রে কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে ব্যক্তিগত কোনো অপরাধের কারণে সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করলে গ্রেফতার বা বিচার করতে কোন অনুমতি লাগবে না। সে ক্ষেত্রে সরকারকে ব্যক্তির অপরাধ সম্পর্কে জানালে সরকারের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, পূর্বে কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হতো। আর এখন নতুন করে যে আইন করার  সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেখানে কোনো কর্মকরতাকে গ্রেফতারের পূর্বে সরকারের অনুমতির দরকার নেই।

এর আগে তিনি সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী জজদের বিষয়ে বলেন, আপনাদের কাছে সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিচারকদের নতুন ল্যাপটপ দেয়া হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

এ সময় তিনি বলেন, বিচারকদের কাজের কথা চিন্তা করে এ সরকার বিচারকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করেছে।

এফএইচ/এসকেডি/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।