পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী সমাজব্যবস্থায় চালু হচ্ছে বিবাহ সনদ


প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৫

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সমাজব্যবস্থায় এবার বিবাহ সনদ ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। পাহাড়ি সমাজে এতদিন বিবাহ নিবন্ধন প্রথার চালু ছিল না। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি বজায় রাখাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেজন্য নিজেদের প্রথাগত সমাজব্যবস্থা, প্রচলিত আইন ও রীতিনীতি অনুযায়ী বিষয়টির ওপর একটি খসড়া প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। সেটি চূড়ান্ত হলে ওই বিবাহ সনদ ব্যবস্থার প্রচলন হবে। বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় উদ্যোগটির খসড়া প্রস্তাবনাও অনুমোদিত হয়।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি স্থানীয় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সোসাইটি ফর ইন্টেগ্রেটেড ওমেন প্রোগ্রেস আয়োজিত ‘সামাজিক প্রথায় বিচার কার্যক্রম গাইডলাইন ও বিবাহ নিবন্ধন সনদ’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।

সংস্থার সভাপতি তনয় দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষে পরিষদ সদস্য স্নেহ কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষে সদস্য সাধান মণি চাকমা, প্রথাগত নেতৃত্বে হেডম্যানদের পক্ষে জেলা হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, মৌজাপ্রধান কাবেরী রায়, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি প্রফেসর মংশানু চৌধুরী, নারী নেত্রী টুকু তালুকদার, বিশিষ্ট আইনজীবী ভগদত্ত চাকমা, সুস্মিতা খীসা, চঞ্চু চাকমাসহ প্রথাগত নেতৃত্ব, সামাজিক নেতা, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।

কর্মশালায় সামাজিক প্রথায় বিচার কার্যক্রম গাইডলাইন ও বিবাহ নিবন্ধন সনদের ওপর জোরারোপ করে বক্তারা বলেন, প্রথাগত আইনে বিচার ব্যবস্থাকে সহজতর করতে এবং জনসেচতনতার লক্ষ্যে এ ধরনের গাইডলাইন খুবই প্রয়োজনীয়। আর নিজেদের সমাজে বাল্য ও বহুবিবাহ রোধসহ পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিবাহ সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত প্রথা, আইন ও রীতিনীতি অনুযায়ী সামাজিক ব্যবস্থায় বিচারিক কজ নিষ্পন্ন করার জন্য সার্কেল চিফ ও মৌজাপ্রধান হেডম্যানের আদালত বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। নিজেদের সমাজব্যবস্থার শান্তি ও শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রথাগত আইন ও রীতিনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালনে সক্ষম। ফলে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা, মামলা, মোকদ্দমা ও আইনি জটিলতার হয়রানি থেকে মুক্ত থাকতে পারে পাহাড়ি সমাজ। ফৌজদারি আইনের খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ মারাত্মক ও জঘন্য অপরাধ ছাড়া ছোটখাটো ও সামাজিক অপরাধগুলোর বিচারিক কাজ হেডম্যান ও সার্কেল চিফরা নিষ্পত্তি করে থাকেন।

তিনি বলেন, আদিবাসীদের সামাজিক বিচার কার্যক্রমে বিবাহের নিবন্ধন প্রথার প্রচলন ছিল না। কিন্তু যুগের তালে পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বিবাহ সনদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেজন্য প্রচলিত সামাজিক প্রথা, আইন ও রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিবাহ সনদ প্রচলন দরকার। সমাজে যে কোনো বিয়ের নিবন্ধন ব্যবস্থাপনার বই সংরক্ষণ করবেন সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যানরা। পরে নিবন্ধন দেখে প্রয়োজনে বিবাহ সনদ দেবেন তারা।  

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।