যে প্রতিবেদনের জন্য রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের সাজা
রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। ১০ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি তদন্ত রিপোর্টের সূত্র ধরে ওই দু'জনকে আটক করা হয়। মিয়ানমারের পুলিশ রয়টার্সের ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ও’কে রাখাইন সংশ্লিষ্ট গোপন নথির বিষয়ে তদন্তের অভিযোগে গত ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ওই ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যেই ওই ঘটনা নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। সরকারের গোপন নথি প্রকাশ করায় ওই সাংবাদিকদের ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু এসব তথ্য প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা নেই সেখানে। এমনকি যেসব গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে সেখানেও সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। ফলে সঠিক তথ্য পাওয়াও সম্ভব হয়নি।
রাখাইনের গ্রামবাসী এবং ওই এলাকা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত রোহিঙ্গাদের দু'জনকে বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে এবং বাকি আটজনকে গুলি করে সেনা সদস্যরা হত্যা করে। রোহিঙ্গাদের হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। ইন দিন গ্রামের স্থানীয় বৌদ্ধরাসহ ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনায় সেনা সদস্য এবং আধাসামরিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও জড়িত ছিলেন। এই ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে রয়টার্স।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের (এআই) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গারা যেন দেশত্যাগ করে সেজন্য তাদের ওপর অমানুষিক নিপীড়ন চালানো হয়েছে এবং তাদের তাদের কোনো কিছু খেতে না দিয়ে ক্ষুধার্ত রাখা হয়েছে। মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারাও তাদের পালানোর প্রধান কারণ হিসেবে খাদ্য সংকটের কথা জানিয়েছে।
গত আগস্ট থেকে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য যাচাইয়ে স্বাধীন গণমাধ্যমকে রাখাইনে প্রবেশেও বাধা দিচ্ছে তারা।
বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং সেখানকার বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা মিলে ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করে একটি গণকবরে তাদের মৃতদেহ চাপা দিয়ে রাখে। ইন দিন গ্রামের রোহিঙ্গাদের হত্যাকাণ্ডের ওই তদন্তের ওপর ভিত্তি করেই রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে আটক করে মিয়ানমার পুলিশ। বৌদ্ধ গ্রামবাসী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং নিহতদের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ পাওয়া গেছে।
সেপ্টেম্বরের ওই হত্যাকাণ্ডের তিনটি ছবি উদ্ধার করে রয়টার্স। একটি ছবিতে দেখা গেছে, একসঙ্গে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন। পেছন থেকে তাদের হাত বেধে রাখা হয়েছে। এদের সবাইকে গুলি করে হত্যা করে সেনাবাহিনী। তারপরেই একটি গণকবরে মাটি চাপা দেয়া হয়।
টিটিএন/পিআর