সেমাইয়ের খাঁচি তৈরিতে ব্যস্ত মাহালী সম্প্রদায়


প্রকাশিত: ০৭:৪৫ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৫

ঈদ-উল- ফিতরে খাবারের তালিকায় প্রথমেই থাকে সেমাই। আর প্রতিটি দোকানে সেই সেমাই রাখার জন্য ব্যবহার হয় বাঁশের তৈরি খাঁচি। তাইতো ঈদ উপলক্ষে জয়পুরহাটের মাহালী সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন এ খাঁচি তৈরির কাজে। সারা বছর তাদের তেমন কাজ না থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে রমজানের এ মাসে তাদের দম ফেলানোর ফুসরত নেই। এ মাসে তারা যে আয় করে তা দিয়ে চলে যায় ২-৩ মাস।

জয়পুরহাট জেলা শহরের মাত্র ১ কিলোমিটার পশ্চিমে ৩০ ঘর মাহালী পরিবারের বসবাস। বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানিয়ে বিক্রি করে কোনো রকমে চলে তাদের সংসার। তবে রমজানের এই ঈদ এলেই বেড়ে যায় তাদের কাজের পরিধি।

কথা হয় মাহালী সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে। জানা যায়, সেমাই তৈরির খাঁচি বানাতে ছোট-বড় সকলের হাত চলে দিন রাত। এতে উপার্জনও হয় ভাল। তবে বাঁশের দাম বেশি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত লাভ টিকছে না তাদের। তবুও এ লাভ দিয়ে চলে পরবর্তী ২/৩ মাস।

খাঁচি প্রস্তুতকারী ভুট্টু, সুরেশ, সুন্দর, মিতিয়াস, সুধীর ও ধীরেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের আগে বাঁশ কিনতে পারলে তাদের ভাল লাভ হতো। কিন্তু অর্থাভাবে তারা বাঁশ কিনে মজুদ করতে পারেনি। এদিকে রমজান মাসের এই ঈদ ব্যতীত প্রায় সারা মাসই কমবেশি ব্যস্ত সময় পার করেন টোপা, ডালি, চাঙ্গারি, কুলা, খই চালা, গুমাইসহ নিত্য নৈমিত্তিক তৈজসপত্র তৈরিতে।

তবে প্লাস্টিকের বাজারে কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে মাহালী সম্প্রদায়ের বাঁশের তৈরি এসব তৈজসপত্র। আধুনিকায়নের এই যুগে গৃহিণীদের নিত্য নৈমিতিক কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাহালী পরিবারের সদস্যদের নিপুণ হাতে তৈরি বাঁশের তৈজসপত্রগুলো এখন অনেকটাই তুচ্ছ-তাচ্ছিলের পণ্যে পরিণত হয়েছে। এতে করে জয়পুরহাটে বসবাস করা ৩০টি পরিবারের প্রায় শতাধিক মাহালী সদস্য অনেকটাই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এ পাড়ার গুণী কারিগর হিসেবে পরিচিত পলাশ, সমুয়েল, রতন, স্বপন, সুবাস, মিনতী, মাধাইসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সকলেই শুধুমাত্র বাপ-দাদার ঐতিহ্যগত পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই কাজটি করে যাচ্ছে। তারা আরো জানায়, বর্তমানে বিভিন্ন গ্রাম থেকে বাঁশ জোগাড় করে এসব পণ্য প্রস্তুত করা হলেও ন্যায্য দামে ক্রেতারা ক্রয় করতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে তাদের অনেকটা দিন অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মাহালী সম্প্রদায়ের সদস্য পলাশ চন্দ্র জানান, কুঠির শিল্পের আওতায় এ কাজে জড়িত প্রতিটি সদস্যকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে ‘আধুনিক পণ্য’ তৈরি করা শেখাতে হবে। সেই সঙ্গে বাঁশের তৈরি পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

এ পাড়ার আরেক কারিগর রতন জানান, এ শিল্প রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এক সময়ের গ্রাম বাংলার গৃহস্থলি কাজে ব্যবহার করা ঐতিহ্যময় এসব পণ্য কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে।

এ ব্যাপারে কুঠির শিল্পের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট ‘বিসিক’ এর উপ-ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বাঁশের তৈরি শিল্পের সাথে জড়িতরা অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে বর্তমানে তাদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

এসএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।