খ্যাতি উপভোগ করছেন সৌম্য
সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উত্থানপর্বের নায়কদের একজন। সাতক্ষীরার ছেলে সৌম্য ঘরোয়া ক্রিকেটের একের পর এক ধাপ পেরিয়ে এখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এক অপরিহার্য সম্পদ হয়ে উঠেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাঘা বাঘা সব খেলোয়াড়ের সামনে তার ক্রীড়া নৈপুণ্য আলো ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর তারই সঙ্গে পাদপ্রদীপের আলোটাও পড়েছে তার উপর। নাম আর খ্যাতি সন্তপর্ণে এসে পিছু নিয়েছে তার। জুটেছে হাজারো ভক্ত-অনুরাগী। এখন আর সাতক্ষীরার সাধারণ ছেলেটি নন তিনি।
ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে মিরপুরের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের ৫ম ও শেষ একদিনের আন্তর্জাতিকে তার অভিষেক ঘটে। ঐ খেলায় তিনি ১৮ বলে ৪ বাউন্ডারির সাহায্যে ২০ রান সংগ্রহ করেন। খেলায় বাংলাদেশ দল ৫ উইকেটে জয় পেয়ে ৫-০ ব্যবধানে জিম্বাবুয়ে দলকে বাংলাওয়াশ করে।
এবছর ২২ এপ্রিল তিনি তার প্রথম ওয়ানডে শতক হাঁকান। মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওডিআইয়ে ১১০ বল মোকাবেলা করে অপরাজিত ১২৭ রান তোলেন। তার এ ইনিংসটিতে ছয়টি ছক্কা ও ১৩টি চারের মার ছিল। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবালের (৬৪) সাথে জুটি গড়ে মূল্যবান ১৪৫ রান সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে মুশফিকুর রহিমের (৪৯) সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে ৯৭ রান তোলেন। এর ফলে তার দল ১০ ওভারেরও বেশি বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটের সহজ জয় পায়। এছাড়াও বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো বাংলাওয়াশ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২৪ এপ্রিল মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত একমাত্র টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে তারও অভিষেক ঘটে। কিন্তু মাত্র ৩ বল মোকাবেলা করে শূন্য রানে রান আউটের শিকার হন তিনি। ঐ খেলায় অবশ্য সাকিব ও সাব্বির রহমানের ক্রীড়ানৈপুণ্যে বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বিরাট জয় পায়।
এ বছরই ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৪ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে বিসিবি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দলের ১৫-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে তিনিও দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন।
৯ মার্চ অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের ৫ম খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩য় উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে (১০৩) সাথে নিয়ে ৮৬ রানের জুটি গড়েন। খেলায় তিনি ৪০ রান সংগ্রহ করেন। এরপর মুশফিকুর রহিমের ঝড়োগতিতে ৭৭ বলে ৮৯ রানের সুবাদে একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষ বাংলাদেশ দলগতভাবে সর্বোচ্চ রান তোলে। বাংলাদেশ ১৫ রানের ব্যবধানে জয়ী হওয়াসহ কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়।
এবার সবশেষ এই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেই তিনি মাত করলেন। সিরিজ সেরা পুরস্কারও তার দখলে।
এই সবকিছু মিলিয়ে গত কয়েক মাসে সৌম্য সরকারের জীবনটা বদলে গেছে অনেকখানি। উঠতি এক ক্রিকেটার থেকে এখন তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের হালের সবচেয়ে বড় ‘সেনসেশন’।
তবে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকাটা উপভোগই করেন সৌম্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপেক্ষে সিরিজ জয়ের নায়ক হয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানালেই তা-ই।
সৌম্য বলেন, “পরিবর্তন তো অনেক এসেছে। আগে বাসার সবার সঙ্গে, বন্ধু-বান্ধব সবার সঙ্গে সহজেই ঘুরতে পারতাম। কোথাও বসতে পারতাম। কিন্তু এখন ওটা সহজেই করতে পারছি না। তবে এখন বাইরে গেলে যেটা হয়, সেটাও অনেক উপভোগ করছি।”
তবে এই খ্যাতির আলোতে চোখ ঝলসাতে না দিয়ে প্রাণ আর হাত খুলে আরো ভালো খেলতে চান বলেই জানান এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার।
এসআরজে