তিয়ান আনমেন স্কয়ারে সেনা অভিযানে নিহত হয়েছিল ১০ হাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৩৮ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়ান আনমেন স্কয়ারে চীনের গণতন্ত্রপন্থীদের যে বিক্ষোভ হয়েছিল সেনাবাহিনী তা শক্ত হাতেই দমন করেছিল। কিন্তু ওই বিক্ষোভে সেনা অভিযানে ঠিক কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল সে তথ্য তখন প্রকাশ করা হয়নি। চীনে সে সময়ের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লন্ডনে পাঠানো এক কূটনৈতিক বার্তায় তখন দাবি করেছিলেন, কমপক্ষে দশ হাজার মানুষ সেনাবাহিনীর এই দমন অভিযানে নিহত হয়। এই কূটনৈতিক বার্তাটি সম্প্রতি ব্রিটেনের জাতীয় আর্কাইভ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। খবর এএফপি।

চীনা কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছিল এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল মাত্র দু'শো। কিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালান ডোনাল্ডের ভাষায়, নিহতের আনুমানিক ন্যূনতম সংখ্যা হচ্ছে দশ হাজার।

তবে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের দেয়া এই হিসেবে সে সময় মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কে তথ্য অন্যান্যদের অনুমান থেকেও প্রায় দশ গুণ বেশি।

ফরাসী বিশেষজ্ঞ এবং হংকং ব্যাপটিস্ট ইউনিভার্সিটির জ্যাঁ পিয়েরে ক্যাবেস্টান অবশ্য মনে করেন ব্রিটিশদের এই আনুমানিক হিসেব যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য, কারণ সম্প্রতি অবমুক্ত করা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দলিলেও এ ধরণের সংখ্যার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

তখন বেইজিং এ যে পরিমাণ মানুষের সমাগম ঘটেছিল তাতে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের এই রিপোর্ট অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়।

জ্যাঁ পিয়েরে ক্যাবেস্টান নিজেও তিয়ান আনমেন স্কয়ারে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার সময়ের কয়েকদিন আগে থেকে বেইজিং এ ছিলেন। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালান ডোনাল্ডের বার্তায় চীনা সেনাবাহিনির অভিযানের নৃশংসতার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

তিয়ান আনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থীদের এই বিক্ষোভ চলছিল সাত সপ্তাহ ধরে। ১৯৮৯ সালে জুনের তিন এবং চার তারিখ রাতে সেনাবাহিনী ট্যাংক নিয়ে সেখানে ঢুকেছিল। তিয়ানানমেন স্কোয়ারের জনতার ওপর সেনাবাহিনীর আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) থেকে সরাসরি গুলি চালানো হয়। এরপর সেসব মানুষের ওপর এই এপিসি চালিয়ে দেয়া হয়।

সৈন্যরা তিয়ান আনমেন স্কয়ারে হাজির হওয়ার পর বিক্ষোভরত ছাত্রদের সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য এক ঘন্টা সময় দিয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনি পাঁচ মিনিট পরেই তাদের আক্রমণ করতে শুরু করে।

এক বার্তায় বলা হয়েছে, ছাত্ররা হাতে হাত বেঁধে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু তাদের গুলি চালিয়ে ফেলে দেয়া হয়। এরপর এসব মৃতদেহের ওপর দিয়ে বার বার সাঁজোয়া গাড়ি চালিয়ে পিস্ট করে ফেলা হয়। এরপর বুলডোজার দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয় দেহাবশেষ। হোস পাইপ দিয়ে পানি ছিটিয়ে পরিস্কার করে ফেলা হয় তিয়ানানমেন স্কোয়ার।

ঘটনার প্রায় তিন দশক পরেও চীনে গণতন্ত্রপন্থীদের এই বিক্ষোভ এবং এটি দমনে সেনাবাহিনীর চালানো অভিযান নিয়ে কোন কথা বলা নিষেধ। চীনের পাঠ্য বই বা গণমাধ্যমেও এ নিয়ে কোন লেখা বা আলোচনা নিষিদ্ধ।

টিটিএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।