ভারতে ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা জারি


প্রকাশিত: ০৮:৫৬ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪

ভারতে কথিত পুলিশের সঙ্গে অপরাধী বা উগ্রপন্থীদের গোলাগুলিতে (ক্রসফায়ার) মৃত্যুর ঘটনার বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ নির্দেশনা জারি করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

ভারতের প্রধান বিচারপতি আর এম লোধা এবং বিচারপতি রহিন্টন ন্যারিমানের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ বলেছেন, কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক কাজ করলেও তার সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই সংঘর্ষের নাম করে তাদের মেরে ফেলা যায় না।

মানবাধিকার সংগঠন পিপলস্ ইউনিয়ন অফ সিভিল লিবার্টিস (পিইউসি) এলের দায়ের করা একটি মামলার সূত্রে আদালত এই নির্দেশিকা জারি করেন। ওই সংগঠনটি মহারাষ্ট্রে ‘এনকাউন্টার’ বা কথিত সংঘর্ষের নামে দাগী অপরাধীদের মেরে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে।

ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিচারপতিরা বলেছেন, ২০১৩ সালে পুলিশের গুলিতে ১০৩ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। সংঘর্ষে ৪৭ পুলিশকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে।

আদালতের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে কোনো অপরাধী বা উগ্রপন্থীর সম্বন্ধে কোনো গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেলে তা অবশ্যই লিখিতভাবে রেকর্ড করিয়ে রাখতে হবে স্থানীয় থানায়। এছাড়াও সংঘর্ষে কারো মৃত্যু হলে এফআইআর করে সেটা স্থানীয় আদালতকে অবশ্যই জানাতে হবে।

আদালতের নির্দেশিকা আরো বলা হয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনাস্থলে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে। দুজন চিকিৎসকে দিয়ে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করাতে হবে। আর গোটা ঘটনা অন্য এলাকায় কর্তব্যরত একজন উচ্চতর অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। তদন্ত চলাকালীন সংঘর্ষে যাওয়া পুলিশ কর্মীদের নিজেদের অস্ত্র জমা দিয়ে দিতে হবে।

সংঘর্ষ চলাকালীন কোনো অপরাধী যদি আহত হন, তাহলে দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে আর তার বয়ান রেকর্ড করাতে হবে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে।

বিচারপতিরা নির্দেশিকাগুলি জারি করার সময়ে বারে বারেই উল্লেখ করেছেন প্রথম তথ্য পাওয়ার সময় থেকে প্রতিটা পদক্ষেপের লিখিত রেকর্ড যেমন রাখতে হবে, তেমনই কোনো ক্ষেত্রেই দেরি করা চলবে না। প্রতিটা স্তরের অগ্রগতি স্থানীয় আদালতকে জানাতে হবে আর প্রতি ছয় মাসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট আরো বলেছেন, সংঘর্ষে কোনো গুরুতর অপরাধী বা উগ্রপন্থী মারা গেলেই চটজলদি সেইসব পুলিশ কর্মীদের পুরষ্কৃত করা যাবে না যতক্ষণ না ওই সংঘর্ষের তদন্ত সম্পন্ন হয়।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেই কথিত সংঘর্ষে অপরাধী বা সন্দেহভাজন উগ্রপন্থীদের মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। ভারত-শাসিত কাশ্মির বা উত্তরপূর্বের আসাম, মনিপুর অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে অনেককে এভাবে মেরে ফেলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। অনেক মাওবাদী নেতা-কর্মীকেও কথিত সংঘর্ষে মেরে ফেলা হয়েছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করে থাকে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।