ঈদকে ঘিরে মৌসুমী শ্রমিকরা এখন ঢাকায়


প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ১১ জুলাই ২০১৫
ফাইল ছবি

রিকশার প্যাডেল ঘোরানোর সঙ্গে তাল রেখেই সংক্ষিপ্ত জীবন কথা তুলে ধরলেন আব্দুল হামেদ নামের এক রিকশাচালক। বয়স ৩৫ ছুঁই ছুঁই। বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়ায়। দুই সন্তানের বাবা। তার অন্য ভাইয়েরাও একই সংসারে। দুই সপ্তাহ হয় ঢাকায় এসেছেন রিকশা চালাতে।

ঈদে বাড়ি যাবেন কি না জানতে চাইলে ঝটপট বলছিলেন, ‘এলায় তো আনু। ঈদ বেরাইলে বাড়িত যাইম। ঈদের আগে-পরত পাইস্যা বেশি। বছরত একবার করি ঢাকাত আইসি, একনা বেশি টাকা ধরির বাদে। (সবে মাত্র আসলাম। ঈদ শেষে বাড়ি যাব। ঈদের আগে-পরে বেশি পয়সা মেলে। বছরে একবার ঢাকা আসি একটু বেশি পয়সা ধরার জন্য।)’

রিকশাচালক হামেদ সাত বছর ধরে ঢাকায় আসছেন ঈদ-রোজাকে উপলক্ষ করে। থাকেন চার-পাঁচ সপ্তাহ। এ সময়ে প্রায় দুই মাসের টাকা আয় করে থাকেন বলে জাগো নিউজকে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আগে একমাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় করতাম। অনেক সময় তা করতে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু এ ঈদ মৌসুমের এ চার-পাঁচ সপ্তাহেই প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করি। এখন তাকে দেখে এলাকার অনেকেই রমজান-ঈদকে সামনে রেখে ঢাকায় আসেন রিকশা চালাতে।

রোজার শুরু থেকেই ঢাকায় যেমন পরিবহন সংকট শুরু হয় তেমনি, পরিবহন ব্যয়ও বাড়তে থাকে। অনেকেই আবার বকশিস হিসেবে বাড়তি টাকা দিয়ে থাকেন। এ কারণে বিশেষ মৌসুম মনে করে সারাদেশ থেকেই নিম্ন আয়ের এই মানুষেরা এমন সময় ঢাকায় ভিড় জমায়।

শুধু রিকশাচালক বা পরিবহন শ্রমিকরাই নয়, রমজান-ঈদ মৌসুমে খণ্ডকালীন চাকরির জন্যও অনেকে ঢাকায় আসেন অনেকে। বিশেষ করে শপিংমলগুলোতে এমন ভাসমান শ্রমিকের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। পরিচিত জন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের অনেককেই ঢাকায় এনে এই সময়ে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা।

ইফতার বা খাবারের দোকানগুলোতেও অনেকে খণ্ডকালীন চাকরি করে সম্মানি পাচ্ছেন। খাবারের দোকান, শপিংমল, কাপড়ের দোকান, শো-রুমগুলোতে চুক্তিভিত্তিক এমন শ্রমে যোগ দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।      

জানা গেছে, এবারের রমজান এবং ঈদে দেশের অর্থনীতিতে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে ইফতার ও সেহরি উৎসবে যোগ হচ্ছে চার হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। পোশাকের বাজারে যোগ হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। রমজান ও ঈদে অ্যাপায়ন বাবদ অর্থাৎ ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হচ্ছে ২৪ হাজার কোটি টাকা।

ধনী মানুষের দেয়া জাকাত ও ফিতরা বাবদ আসছে ৬০ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত আসছে ৬শ’ কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় চার হাজার কোটি টাকা।

আর বিশাল এই অর্থনীতিকে ঘিরে ঢাকায় নিম্ন আয়ের ভাসমান মানুষের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এদের বেশির ভাগই রোজার শেষে অথবা ঈদের পরপরই গ্রামে ফিরে যাবেন।

এএসএস/এসএইচএস/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।