শুধু আগস্টেই মিয়ানমারে ৬৭০০ রোহিঙ্গা নিহত : এমএসএফ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০১ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর ওই মাসেই কমপক্ষে ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ারস (এমএসএফ) বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে এক জরিপ চালানোর পর এ তথ্য জানিয়েছে।

মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা সেনা অভিযানে ৪০০ রোহিঙ্গার প্রাণহানির তথ্য জানালেও এমএসএফের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। আন্তর্জাতিক এ দাতব্য সংস্থা বলছে, ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতার পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী সহিংসতার জন্য সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছে এবং তারা কোনো অন্যায় কাজ করার দাবি অস্বীকার করেছে। এমএসএফ বলছে, আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।

দাতব্য সংস্থাটির জরিপে দেখা গেছে, বার্মা নামে পরিচিত মিয়ানমারে ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৯ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তবে সহিংসতার কারণেই ৫ বছরের কম বয়সী ৭৩০ শিশুসহ ৬ হাজার ৭০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জানায় প্রায় ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই মুসলিম সন্ত্রাসী বলে দাবি করে মিয়ানমার।

সাংবাদিক ও গবেষকরা শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়ায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আরো জোরালো হচ্ছে।

বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রতিনিধি জোনাথন হেড বলেছেন, অনেক প্রতিবেদনে রাখাইনের ভয়াবহ ঘটনাগুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে; তবে রাখাইনের তুলা তুলি গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা নিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যম খবর দিয়েছে।

‌জোনাথন বলেন, ‘আমি কয়েকজন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তারা সহিংসতার শঙ্কা থেকেই পালিয়েছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তবে তারা বাস্তবেই সহিংসতার মুখোমুখি হননি।

এমএসএফ’র সুশৃঙ্খল এ গবেষণা চিত্র মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর পরিচালিত অভিযান যে যথেষ্ট নৃশংস ছিল এবং তাদের এই নৃশংসতাই মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা দায়েরের জন্য যথেষ্ট।

মিয়ানমার সামরিক বাহিনী গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই সময় দেশটির সীমান্তে ৩০টির বেশি পুলিশ ও সেনা তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের হামলার জবাবে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে।

অভ্যন্তরীণ এক তদন্তের পর নভেম্বরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কোনো ধরনের সহিংসতার সঙ্গে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে কোনো বেসামরিক হত্যা, রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া, নারী ও তরুণীদের ধর্ষণ এবং মালামাল লুটের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব নেই মিয়ানমারে; দেশটির সরকার এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করে। এমনকি দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সরকার রোহিঙ্গা শব্দটিও ব্যাবহার করে না, বরং তাদের বাঙালি মুসলিম হিসেবে ডাকা হয়।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।