কুমিল্লার ঈদ বাজারে ভারতীয় পোশাকের আধিপত্য
গত বছর ঈদ বাজার দখলে ছিল ভারতীয় বাংলা চ্যানেল স্টার জলসায় প্রচারিত সিরিয়াল বোঝে না সে বোঝে না সিরিয়ালের নায়িকা পাখির পরিহিত ‘পাখি ড্রেস` এর। ওই বছর পাখি ড্রেসের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছিল। এবারের ঈদে সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার ঈদের বাজার মাত করে ফেলেছে ভারতীয় জনপ্রিয় সিরিয়াল কিরণমালার পোশাক।
এছাড়াও শিশু থেকে শুরু সব বয়সীদের পোশাকে ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়াল কিংবা সিনেমার নায়িকাদের নাম ও পোশাকের আধিপত্য লক্ষ্য করা গেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে নগরীর মার্কেটগুলোও বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে, করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা।
রমজানের মাঝামাঝি সময়ে এসে অনেকটা জমে উঠেছে কুমিল্লার ঈদের বাজার।
মার্কেট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ভারতের নামিদামি ব্র্যান্ড ছাড়াও হিন্দি ও কোলকাতার জনপ্রিয় সিরিজ নাটকের নায়িকার নামানুসারে এবার বিপুল পরিমাণ থ্রি-পিস কুমিল্লার বাজারে স্থান পেয়েছে।
নগরীর অত্যন্ত ব্যস্ততম মার্কেট সাত্তার খান কমপ্লেক্সেও আম্মাজান বস্ত্র বিতানের বিক্রয় কর্মী আবুল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এবার ঈদে স্টার জলসায় প্রচারিত কিরণমালা সিরিয়ালের কিরণমালা পোশাকের বেশ চাহিদা থাকলেও এ পোশাক নিয়েও ক্রেতারা নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। দাম ও গুণেমানে কিরণমালা ড্রেসের পার্থক্য থাকলেও তা সহজে অনেক ক্রেতা চিনতে না পারায় প্রতারিত হচ্ছেন তারা। দামি কিরণমালায় রয়েছে পুঁতির ভারি কাজ। কোনো কোনো কিরণমালা মসলিন ও ভেলভেট কাপড় দিয়ে বানানো।
দোকানীরা জানান, নগরীর বিপণন কেন্দ্রে মেয়েদের ‘কিরণমালা’ নামের পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশ। দামেও রয়েছে হেরফের। মাঝারি থেকে বড়দের জন্য তৈরি এ পোশাকের দাম বিক্রেতারা হাঁকছেন ৪ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। যতই দিন যাচ্ছে ততই কিরণমালার দাম ও চাহিদাও বাড়ছে। তবে ভারতীয় কিরণমালার আদলে দেশে তৈরি নকল কিরণমালাও ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ভারতীয় জলপরী, রাই কিশোরী, আনারকলি, আশিকি, মাসাককলি, সানি, কোয়েল, চিকনি চামেলি, বিপাশা, অর্চনা, অমিত, ডিসকো চালি, জীবিকা, রিভা, বীরা, ছানছান, ঝিলমিল, পাঙ্খুরি, আশিকি টু, বুগিউগি, টুপুরসহ নানা বাহারি নামের বিভিন্ন পোশাক দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।
কুমিল্লা মহানগরীর ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজার মীম শাড়ি বিতানের মালিক সহিদুল আলম বাবুল জাগো নিউজকে জানান, কুমিল্লার ঈদবাজারে শাড়ির ক্ষেত্রেও ভারতের দাপট বজায় আছে। শাড়িতে ভারতীয় নায়িকা ও সিনেমার হাওয়া জোরদার। এর মধ্যে রয়েছে রেশম কা জরি, ঝিলিক, রাধিকা, ওহ লায়লা, তিসমার খান, জারা জারা, আয়শা টাকিয়া, দিল দো কলি, বধূয়া ইত্যাদি নামের ভারতীয় শাড়ির মধ্যে পাথর আর চুমকির কারুকাজ করা গাঢ় রঙের রাসলীলা শাড়িতে বাজারের দোকানগুলো ভরে গেছে।
ভারতীয় এসব শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এদিকে ভারতীয় পোশাকের পাশাপাশি দেশীয় সুতি ও জর্জেটের সুতির থ্রি-পিস বিক্রি হচেছ ১ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর মার্কেটগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। নগরীর মার্কেট ও নারীদের তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তরুণীদের থ্রি-পিস কেনাকাটার ধুম।
নগরীর কান্দিরপাড় সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক টাওয়ার, ময়নামতি গোল্ডেন টাওয়ার, চৌরঙ্গী শপিং সেন্টার, হোসনেআরা ম্যানসন, সাইবার ট্রেড, নূর মার্কেট, রামঘাট এলাকায় কুমিল্লা টাওয়ার, রেইসকোর্সে ইস্টার্ণ এয়াকুব প্লাজা, নিশা সেল টাওয়ার শপিং জোন ও নগরীর নজরুল এভিনিউতে আড়ং শো-রুমে তরুণীদের থ্রি-পিস কেনার ধুম পড়েছে।
গণি ভূইয়া ম্যানশনের প্যারাডাইস বস্ত্র বিতানের মালিক নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, এ বছর ফ্লোরটার্চ ও সেমিলং কামিজের জন্য ভারতের তৈরি নামিদামি ব্র্যান্ডের সুতি কাপড়ের থ্রি-পিসের মধ্যে জিনাম, মারিয়াবি, শাহিনুর পায়েল, শাহীবা, জেরিন, ইয়াসিকি, গঙ্গা এবং জর্জেটের মধ্যে খোয়াব, কারিনা, শবনম, কাহানী, রিভা, জালজালা, জুবায়েদা, কিমুরা, কারিশমা, বিবেক, কাসিস, মিক্সি ও ছাইয়েদেনাসহ পাকিস্তানী সুতি, জামদানি ও কাশ্মীরি চুন্ডি কাপড়ের থ্রি-পিসের চাহিদা অনেক বেশি।
ভারতীয় ছাড়াও পাকিস্তানী, কাশ্মিরী কিছু নিত্যনতুন ডিজাইনই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। এছাড়াও শিশুদের কাপড়, জুতা ও পাঞ্জাবির দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। ফুটপাতে ঈদ বাজার পুরোদমে শুরু হয়েছে। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই নিন্ম-মধ্যবিত্ত লোকজন তাদের পছন্দমতো কেনাকাটা করছেন।
এমজেড/এমআরআই