বোর্ড বই নিয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত বই নিয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা এমপি নূরজাহান বেগমের কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধি অনুসারে জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোটিশের জবাবে একথা বলেন তিনি। এসময় অধিবেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।
নোটিশে নূরজাহান বেগম বলেন, স্কুলের ব্যাগটা অত্যন্ত ভারী। আমরা কি আর বইতে পারি/ এও কি একটা শাস্তি নয়, কষ্ট হয়, কষ্ট হয়। আমার কষ্ট বুঝতে চাও, দোহাই পড়ার চাপ কমাও/কষ্ট হয়।
এটা নিছক কোনো গান নয়, এক নিরেট বাস্তবতা নূরজাহান বেগম এমন মন্তব্য করে বলেন, বাংলাদেশের স্কুলপড়ুয়া শিশুরা বোঝা বয়ে বয়ে ঠিক কত অসুখ বাধিয়ে ফেলছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখে বলা যায়, সবার অসচেতনতায় প্রতিদিন বাংলাদেশের শিশুরা একটু একটু করে গুরুতর শারীরিক ক্ষতির দিকে এগুচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকা শিশু হাসপাতালে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু চিকিৎসা সেবা নিতে এসে বলেছে তাদের পিঠের ব্যথা, সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারার কষ্ট, মেরুদণ্ড ব্যথা ইত্যাদির কথা। এর কারণ হিসেবে তাদের বহন করা স্কুল ব্যাগের ওজন বেশি বয়ে নিতে কষ্ট হয়, এই শিশুদের মধ্যে বাংলা বা ইংরেজি উভয় মাধ্যমের শিশুরা রয়েছে।
শিশু বিষেজ্ঞদের মতের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দিনের পর দিন ভারী ব্যাগ বইলে শিশুদের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়। চাপ পড়তে পড়তে দুই হাড়ের মাঝখানে নরম পদার্থ শুকিয়ে যায়। এতে দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথা, পিঠ বেঁকে যাওয়া, হাড়ে ফাটল ধরা ও শিশুর ঠিক মতো বেড়ে উঠতে না পারার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্কুল ব্যাগের ওজন স্বাভাবিক সীমার মাত্রা পেরিয়ে গেলে কল্পনাও চাইতেও বেশি কিছু ঘটতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্কুলিওসিস। এর ফলে শিশুদের পরবর্তী জীবনে যেমন বয়োবৃদ্ধ অবস্থা ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন শিশুকে ব্যাগের ওজন নিজের ওজনের ১০ শতাংশের কম হতে হবে। অথচ আমরা প্রায়ই দেখি এসব শিশুদের ব্যাগের ওজন কারো চার কেজি, কারো বা সাড়ে ৭ কেজি পর্যন্ত দেখা যায়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে কোন ক্লাসের শিশুরা কত ওজনের ব্যাগ বহন করবে, সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। যেমন কোনো শিশুর বোর্ড নির্ধারিত তিনটি বই থাকলেও শিশুকে বহন করতে হয় ১২টি বই। এরপর রয়েছে আটটি খাতা, গাইড বুক, টিফিন বক্স ও পানির বোতল। সব মিলিয়ে ব্যাগের ওজন দাঁড়ায় কমপক্ষে ছয় কেজি। যা একজন শিশুর পক্ষে নিয়মিত বহন করা কষ্টসাধ্য এবং ঝঁকিপূর্ণ।
এর জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি ওনার মূল বক্তব্যের সঙ্গে একমত। শিশুদের জন্য এত ভারী ব্যাগ বহন করা কঠিন। আমরা প্রধানমন্ত্রী এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে বহু আলোচনা করেছি, যাতে শিশুদের কত কম বই নিয়ে স্কুলে নিয়ে আসা যায়। এজন্য আমরা ই-বুক তৈরি করছি। এটা তৈরি হয়ে গেলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এবার দিতে না পারলেও আগামীতে দিতে পারবো।
তিনি এসময় বলেন, এবারে আমরা হাইস্কুল লেভেলে প্রায় ৬৫১ পৃষ্ঠার বই কমিয়ে দিয়েছি। এছাড়া ই-বুকিং নিয়ে আমরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, তিনি (নূরজাহান বেগম) একজন আইনজীবী। আমরা ওয়ান, টু ও থ্রি ক্লাসের জন্য তিনটি বই নির্ধারিত করে দিয়েছি। এই তিনটি বইয়ের ওজন তো এক কেজির কম। তিনি আবার বলেছেন যে, শিশুরা ১২টা বই নিয়ে যায়, আবার গাইড বই নিয়ে যায়।
এই (গাইড) বই তো নিষেধ। যে বিক্রি করছে, যে কিনেছে কেন তিনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন না। আর শিশুরা কেন গাইড বই নিয়ে যাবে। যে শিশুটা তিনটা বই নিয়ে যাবে, সে কেন ১২টা বই নিয়ে যাবে। তার গার্জিয়ানরা আছেন তারা কী করেন?
এইচএস/বিএ/এমএস