ক্ষমতার কেন্দ্রে উঠে আসা এমারসনের কোষ্ঠি বিচার

কাওসার বকুল
কাওসার বকুল কাওসার বকুল , সহ-সম্পাদক, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় বুধবার দেশে ফিরে আসলে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে এমারসন নানগাওয়াকে উষ্ণ অভিনন্দন জানায়। জনগণের অভ্যর্থনায় সিক্ত হয়ে দেশের মাটিতে দৃঢ় মনোবলে পা রাখেন ৭৫ বছর বয়সী এমারসন।

আজ শুক্রবার জিম্বাবুয়ের এক নতুন অধ্যায়ের সাক্ষী হল সারা বিশ্বের জনগণ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন সদ্য বহিষ্কৃত এই ভাইস-প্রেসিডেন্ট। উপস্থিত উল্লসিত জনতার বিশ্বাস, দরিদ্র জিম্বাবুয়েকে উন্নতির দিকে টেনে নিয়ে যাবেন তিনি।

মানুষের কাছে ক্রোকোডাইল বা কুমির হিসেবে বেশি পরিচিত এমারসন। ১৯৬০ সালের দিকে ক্রোকোডাইল গ্যাংয়ের ব্যানারে সাদা চামড়ার মানুষদের সৃষ্ট উপনিবেশের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন তিনি। তার পর থেকেই ক্রোকোডাইল হিসেবে খ্যাতি পান এমারসন।

১৯৮০ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভের পর তিনি তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট হন রবার্ট মুগাবে। দীর্ঘ ৩৭ বছর ক্ষমতায় থাকার পর চাপে পড়ে পদত্যাগ করেন তিনি।

এমারসনকে হটিয়ে নিজের স্ত্রীকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছিলেন মুগাবে। কিন্তু এমারসনকে বরখাস্তের পর দেশের রাজনীতি একেবারে পাল্টে যায়।

৬ নভেম্বর এমারসনকে বহিষ্কার করার পর নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যান তিনি। তবে তাকে বহিষ্কারের পর দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম দখলে নিয়ে মুগাবেকে গৃহবন্দি করে রাখে দেশটির সেনাবাহিনী।

মুগাবেকে পদত্যাগের জন্য চাপও দিতে থাকে সেনাবাহিনী। একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন মুগাবে। এতে তার ৩৭ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে।

তিক্ততা

মুগাবের শাসনামলে দুর্দিন থাকার কারণেই জনগণ তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে। হঠাৎ করেই বিনা কারণে এমারসনকে বহিষ্কার করা এবং নিরাপত্তার খাতিরে দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যাওয়া; অন্যদিকে মুগাবের কপটতা ও তার শাসনে জনগণের দুর্দশার জেরে রাতারাতি নায়ক বনে যান এমারসন।

emerson2

সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের জনগণও মুগাবের বিরুদ্ধে এবং এমারসনের পক্ষে চলে যায়। এমনকি মুগাবের দলও তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।

দেশটির মুদ্রার মানও একেবারে কমে গেছে। একশ ট্রিলিয়ন ডলারের মুদ্রা রয়েছে সেখানে। দুই বছর আগে নেয়া উদ্যোগ এখনও বাস্তবায়নের পদক্ষেপই নেয়নি মুগাবে।

এছাড়া সাদা চামড়ার মানুষদের প্রাধান্য দিতেন মুগাবে। তার ক্ষমতায় টিকে থাকার পেছনেও হাত রয়েছে তাদের। দেশটির কিছু এলাকায় বসবাসরত শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের বাড়তি সুবিধা দিতেন তিনি।

কিন্তু এমারসন সেগুলো ধরে ফেলেন। বরাবরই এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল তার।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরার সময়ই জনগণ তাকে হর্ষধ্বনি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে এমারসনের স্থান তাদের সর্বোচ্চ নেতার আসনে রাখা হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গিকার করেছেন এমারসন।

মুগাবের শাসনামলেও ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালে রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ অাফ্রিকার সঙ্গে তিনি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিলেন।

২০০১ সালে রাজনৈতিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিশেষ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে পশ্চিমাবিশ্ব। কিন্তু ২০১৫ সালে সেই অবরোধ উঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।

বিদেশিদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ার কাজ সুচারুভাবে করেছেন এমারসন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের কাছে আস্থা, বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করেছেন তিনি।

জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনীতে তার কী পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেটা আর নতুনভাবে বলার অবকাশ নেই।

ফিরে দেখা

এমারসনের শপথ অনুষ্ঠানে বহু সমর্থক প্ল্যাকার্ডে লিখে নিয়ে এসেছেন, তারা পরিবর্তন চান, দেশের অর্থনীতির পরিবর্তন চান; তাদের বিশ্বাস এমারসন ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেশের অর্থনীতি ঢেলে সাজাবেন।

emerson2

১৯৮০ সালের পর থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের নিরাপত্তা মন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও জানু-পিএফ পার্টির ২০০৮ সালের নির্বাচনের যাবতীয় সিস্টেম তৈরি করেছেন তিনি।

বলা চলে মুগাবেকে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখেন তিনিই। ১৯৬০ সাল থেকেই মুগাবের পরিবারের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তার। মুগাবের এলাকায় সেসময় স্থানীয় এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতেন এমারসন।

সে সময়ই মুগাবের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। উপনিবেশবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে ১০ বছর একসঙ্গে কারাভোগ করেছেন তারা। জেলে থাকা অবস্থায় আইন বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন এমারসন।

১৯৮০ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মুগাবে। আর কাজের মাধ্যমে নিজেকে তুলে নিয়ে আসেন এমারসন। এবার ক্ষমতা পেয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পারলে নিজের আসন অনেক শক্ত হবে এমারসনের।

বরখাস্তের পর বুধবার প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে এসে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নতুন এক বাস্তবতা অবলোকন করবে জিম্বাবুয়ে।

৩৭ বছর ধরে মুগাবের শাসনে তৈরি হওয়া ফাঁক-ফোকর বন্ধ করতে এমারসনকে যে বেগ পেতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি ঠিক কী করতে যাচ্ছেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। আর তার ওপরই নির্ভর করবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের ফল। ততোদিন রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকছেন এমারসন।

সূত্র : আল জাজিরা

কেএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।