রোহিঙ্গা ফেরাতে সমঝোতা : উপেক্ষিত বাংলাদেশের দাবি
ঢাকার কয়েকটি দাবিতে সাড়া না দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোতে দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির কার্যালয়ে দুই দেশের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের কিছু দাবিতে সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, সমঝোতা স্মারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কাজ স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে শুরু করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে কতদিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার এই কাজ শেষ হবে সেব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দিতে রাজি হয়নি মিয়ানমার।
বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বৈঠকে বসেন। প্রায় ৪৫ মিনিট ব্যাপি এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে তারা অালোচনা করেন।
সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা কার্যালয়ের মন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সোয়ে স্বাক্ষর করেন। এসময় তারা ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষরিত দুই দেশের সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তিতেও অনুসমর্থন দেন।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে দেশটির এক ডজন পুলিশি তল্লাশি চৌকি ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলার জেরে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে সেনাবাহিনী। অভিযান শুরুর পর থেকে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন থেকে এখন পর্যন্ত ছয় লাখ ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছেন।
এর আগে বুধবার মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সময়সীমা নির্দিষ্ট করার বিষয়টি বৈঠকে তোলেন। সমঝোতা স্মারকে ওই সময়সীমা উল্লেখের দাবি জানান তারা।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশ্লিষ্টতা চায় বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার বাংলাদেশের সব দাবিতে সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর সময় নির্ধারণে একমত হলেও কবে নাগাদ শেষ হবে সেব্যাপারে কিছুই জানায়নি মিয়ানমার।
বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যদিও আমাদের সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়নি মিয়ানমার; তারপরও আমরা অনেক ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছি। যে কোনো ধরনের আলোচনায় এটা সম্ভবও নয়।
চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করতে চায় মিয়ানমার। বাংলাদেশের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কাজ শেষ করতে চায় ঢাকা। যদিও মিয়ানমার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ছাড়াই এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে চায়।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে মিয়ানমার নমনীয় অবস্থান দেখালেও কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে সব রোহিঙ্গা ফেরত নিতে দুই দেশের পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে একমত হয়েছে।
মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিন্ত কিয়াইং রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ তাদের প্রত্যাবাসনের ফরম পাঠানোর পরপরই যত শিগগিরই সম্ভব আমরা তাদেরকে ফেরত নিতে প্রস্তুত। প্রত্যাবাসনের আগে রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ব্যক্তিগত পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্তসহ নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হবে বলে জানান তিনি।
সমঝোতা স্বারকে স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, এটা হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। আমরা এখন দ্বিতীয পর্যায়ের কাজ শুরু করবো।
তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে বাড়ি-ঘর পুড়ে গেছে। তাদের জন্য বাসযোগ্য করতে সময় লাগবে। তবে কীভাবে পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হবে সেব্যাপারে তথ্য জানায়নি বাংলাদেশ সরকার।
এসআইএস/আইআই