শ্রোতারা এখন সিডি কিনে গান শোনেন না
মেহরীন মাহমুদ। বাংলা পপ গানের জনপ্রিয় একজন কণ্ঠশিল্পী। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি মাতিয়ে রেখেছেন শ্রোতাদের নিজস্ব গায়কী আর সুরের মাধুর্যে। সেই ২০০০ সালে ‘আনারি’ অ্যালবাম দিয়ে গানের ভুবনে যাত্রা শুরু করেন। তারপর কনসার্ট, চলচ্চিত্রে নিয়মিত কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি প্রকাশ করেছিলেন ৬টি একক অ্যালবাম।
২০০৮ সালে হুট করেই ঘোষণা দিয়েছিলেন আর অ্যালবাম প্রকাশ করবেন না। তবে মেহরীনের ভক্তদের জন্য সুখবর হলো সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তিনি। শিগগিরই প্রকাশ পেতে যাচ্ছে তার সপ্তম একক ‘সপ্তম’। নতুন অ্যালবাম ও সমকালীন সঙ্গীত নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখী হয়েছিলেন মেহরীন। সঙ্গে ছিলেন লিমন আহমেদ-
জাগো নিউজ : প্রায় সাত বছর পর অ্যালবাম নিয়ে ফিরছেন। কেমন লাগছে?
মেহরীন : ফিরে আসাটা যে কোনে সময়ই আনন্দের। সবাই প্রিয়জনের কাছে, প্রিয় আঙ্গিনায় ফিরে আসতে চায়। আমিও এলাম; আমার শ্রোতাদের কাছে। প্রিয় গানের ভুবনে। অবশ্য আমি এই সাত বছরে যে কোনো গান করিনি তা কিন্তু নয়। চলচ্চিত্রে গেয়েছি, বিভিন্ন সময় মিক্সড অ্যালবামে গেয়েছি। তবে বহুদিন নিজের কোনো একক ছিলো না। ‘সেভেন’ দিয়ে সেই প্রত্যাবর্তনটা হওয়াতে খুব ভালো লাগছে। আশা করছি এই অ্যালবামটি গ্রহণ করবেন শ্রোতারা।
জাগো নিউজ : অ্যালবামের নাম সপ্তম রেখেছেন। এর কী কোনো বিশেষ কারণ আছে?
মেহরীন : হ্যাঁ। প্রথমত, ২০০৮ সালে ‘তুমি আছো বলে’ অ্যালবামের পর এটি আমার সপ্তম অ্যালবাম। পাশাপাশি বছরের সপ্তম মাস জুলাইয়ের সাত তারিখে এটি প্রকাশ পাবে। গ্রামীনফোনের সব গ্রাহকরা নির্দিষ্ট শর্তে গানগুলো শুনতে পাবেন। সবদিক থেকেই সাতের ছড়াছড়ি। এ বিষয়টাই অ্যালবামের নাম ‘সপ্তম’ রাখতে উৎসাহিত করেছে।
জাগো নিউজ : অ্যালবামের গান সম্পর্কে বলুন?
মেহরীন : মোট ১০টি গান থাকবে। আমি চেষ্টা করেছি আমার প্রজন্ম ও বর্তমান প্রজন্ম- দু’টি প্রজন্মের রুচি ও পছন্দকেই প্রাধান্য দিতে। গানের কথা, সুর ও সঙ্গীতে তার ছাপ রয়েছে। প্রতিটি গানের জন্যই অনেক বেশি সময় দিয়েছি। একই সাথে টেকনোলজির সঠিক ব্যবহার করা হয়েছে যথাযথ। চলতি মাসের ৭ তারিখে (মঙ্গলবার) গ্রামীনফোনে ডিজিটাললি প্রকাশ পাবে অ্যালবামটি। বিভিন্ন ধাঁচের গানের পাশাপাশি ‘মদিরও বাঁশরী বাজে’ শিরোনামের নজরুল সঙ্গীত রেখেছি। এছাড়াও শ্রোতারা রিমঝিম এ বরষা, আধো আলো আঁধারে, আজ এক নতুন দিন ইত্যাদি গানগুলো শুনতে পাবেন। আশা করছি অ্যালবামের গানগুলো ভালো লাগবে সবার।
জাগো নিউজ : অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজন করেছেন কারা?
মেহরীন : এই অ্যালবামের জন্য সঙ্গীতায়োজন করেছেন সময়ের আলোচিত মিউজিক তারকারা। তাদের মধ্যে একটি গান করেছেন হাবিব ওয়াহিদ। সাকি আহমেদের লেখা গানটিতে সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন তিনি। এছাড়া অন্য গানগুলো সঙ্গীতায়োজন করেছেন বাসু দেব, জাহাঙ্গীর হায়দার দীপন, ফুয়াদ ইবনে রাব্বি।
জাগো নিউজ : অ্যালবামটি তো ডিজিটাললি প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু সিডি আকারে বাজারে আসবে কবে?
মেহরীন : জানি না। আসলে আমার ইচ্ছে নেই সিডি আকারে প্রকাশের। কারণ, গেল কয়েক বছর দেখছি সিডির বাজারটি একদম ভালো নয়। আর শ্রোতারাও এখন গান ডিজিটাললিই গ্রহণ করছেন। সবাই গান শুনছেন ফোনে। সিডি কিনে গান শোনার সময় বা মানসিকতা শ্রোতাদের নেই। তাই আমিও ওপথে হাঁটতে চাইনি। তবে গানের ভিডিও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সিডি আকারে অ্যালবাম প্রকাশ করবো।
জাগো নিউজ : আপনি তো বাংলাদেশি আইডলের বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
মেহরীন : এককথায় বলবো দারুণ। এটি ফ্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের একটি অনুষ্ঠান। এখানে আমার অন্তর্ভূক্তি ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব উপভোগ করেছি। তবে কিছু মন্দ অভিজ্ঞতাও আছে। অবশ্য সেগুলো নগন্য। যেমন, এই শো‘তে একজন বিজয়ী নির্ধারণে চূড়ান্ত রায় দেয় দর্শকেরা। এতে করে অনেক মেধাবী বা যোগ্যরা ঝড়ে যায়। আরেকটা বিষয় হলো, এই শো-এমনকি এধরনের যেসব রিয়েরিলিটি শোগুলো আমাদের দেশে হয় তার থেকে বেরিয়ে আসা বেশিরভাগ প্রতিযোগীরাই নিজেদের শিল্পচর্চার ক্ষেতে ধরে রাখতে পারে না।
কিছুদিন তাদের মধ্যে একটা ঘোর কাজ করে। তারপরে সেটা কেটে গেলে খেই হারিয়ে ফেলে। এটা ঠিক না। শিল্প সাধনা অনেক বড় ব্যপার। একজন ফেরদৌসি রহমান, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর, আইয়ূব বাচ্চুরা হুট করে জন্মায় না। সময় দিতে হয়। এই যে আমরা-টিকে আছি শত চড়াই উৎরাই পেরিয়েও। আমাকে আমার কাজ করে যেতে হবে। সময় বলবে আমি কোথায় যাবো, কিভাবে সম্মানিত হবো। তবে ব্যতিক্রমও আছে। এইসব রিয়েলিটি শো থেকে বেরিয়ে আসা অনেকেই দারুণ কাজ করছে। তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হবার বাসনা কাজ করছে। তারা শিখছে প্রতিনিয়ত-কাজ করছে অনেক। এটা ভালো। কাজ বেশি হলে যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ থাকে। সেখান থেকে মানসম্পন্ন গানের দিকেঁ ঝোঁক আসে।
জাগো নিউজ : আপনার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কী নিয়ে?
মেহরীন : আপাতত নিজের নতুন একক নিয়ে ব্যস্ত আছি। এর নানা বিষয় ও প্রচার নিয়ে সময় কাটছে। এছাড়া সম্প্রতি ইফতেখার চৌধুরীর পরিচালনায় একটি ছবির গানে কণ্ঠ দিলাম। এটির সুর-সঙ্গীত করেছেন ফুয়াদ আল মুক্তাদীর। আর কনসার্ট তো থাকছেই। ঈদেও নানা রকম অনুষ্ঠান ও কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকবো।
জাগো নিউজ : ঈদ কোথায় করবেন?
মেহরীন : আমি সবসময়ই চেষ্টা করি ঢাকাতেই ঈদ করতে। এবারও তাই করবো। প্রিয় মানুষরা সব এখানেই।
জাগো নিউজ : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মেহরীন : জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ। সেইসাথে সকল পাঠক-শ্রোতা-ভক্তদের বলবো বাংলা গান শুনুন, বাংলা সঙ্গীতের পাশে থাকুন। সবাইকে ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা।
এলএ