শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়রসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা


প্রকাশিত: ০১:৪৩ পিএম, ৩০ জুন ২০১৫

শরীয়তপুরে বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আতাউর রহমান দুদকের দায়ের করা অভিযোগটি আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)  আইনজীবী ও মামলার বিবরণে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব রেকর্ডভুক্ত উত্তর মধ্যপাড়া মৌজার ৪৩৮নং খতিয়ানের ২০,২১,২৭ ও ২৮ নং দাগের ৩ একর ৭১শতাংশ জমি যার সর্বনিম্ন বাজার দর ছিল ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকা। উক্ত জমি বিক্রির জন্য আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল ২০১২ সালের ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করেন। মাত্র ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে দরপত্র দাখিল করে। ওই তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে জে সরদার কর্পোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি প্রকৃত মূল্য ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৫ টাকার পরিবর্তে মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ওই জমি বিক্রি করে। গত ৩০/১২/২০১২ইং তারিখে শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন কামাল দাতা হিসেবে জে সরদার কর্পোরেশনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই আবদুস সালামের নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন।

দলিলে জমি বিক্রির টাকা বুঝে পেয়ে জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বিদ্যালয়ের তহবিলে কোনো টাকা জমা দেয়া হয়নি। ২ মাস ১৮ দিন পরে গ্রহীতাগণ ৭০ লাখ ও ৮০ লাখ টাকার ২টি আলাদা চেক প্রদান করে। ওই চেক দুটি বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হলে চেকের স্বাক্ষর মিল না থাকায় এবং গ্রহীতার ব্যাংক হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃক চেক দুটি ফেরত প্রদান করে। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়  বিষয়টি তদন্ত করে গত ৬ আগস্ট ২০১৪ তারিখে দুদকের উপরিচালক মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৮ ধারা ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১০৯।

অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে লোভের বশবর্তী হয়ে আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক গাজী মো. শামসুল আরেফিন তদন্ত শেষে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সি, বিদ্যালয়ের সদস্য সচিব প্রধান শিক্ষক আনোয়ার কামাল, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবদুস সালাম হাওলাদার, মজিবুর রহমান হাওলাদার, আইউব আলী মল্লিক, আব্দুল কুদ্দুস মোল্যা, বেগম আলফাতুন্নেছা, সুজন সাহা, সংগীতা সাহা, রনজিৎ কুমার সাহা ও জমি গ্রহীতা জাহাঙ্গীর আলম ও আবদুস সালামকে মামলায় অভিযুক্ত করে গত ২৮ মে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুদক চার্জশিট দাখিল করেন। মঙ্গলবার আদালত অভিযুক্তদের উপস্থিতির জন্য দিন ধার্য করেন। অভিযুক্তরা কেউ আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দাখিল করা অভিযোগ পত্রটি আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মীর শাহাব উদ্দিন (উজ্জল) জাগো নিউজকে বলেন, পৌরসভার আঙ্গারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ৬ আগস্ট দুদকের উপরিচালক (ফরিদপুর অঞ্চল) মলয় কুমার সাহা বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। গত ২৮ মে শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুদক চার্জশিট দাখিল করে।  সিনিয়র স্পেশাল জজ ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামিদের হাজির হওয়ার তারিখ ছিল। আসামিরা কেউ আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করনি আদালত।

মো. ছগির হোসেন/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।