শার্শায় ধর্ষণের শিকার সেই মেয়েটি আর বাঁচলো না
সোনিয়া খাতুন (১২)। তিন মাস আগে ধর্ষণের শিকার হয়। এরপর জরায়ুতে ক্ষত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সেখানে ক্যান্সার হয়। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে শনিবার রাতে ওই কিশোরী ‘সভ্য’ সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে। পুলিশ রোববার দুপুরে যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করলে এদিন বিকেলে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। সোনিয়া খাতুন যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মিলন সরদারের মেয়ে।
শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক জাগো নিউজকে জানান, এপ্রিল মাসে সোনিয়া ধর্ষণের শিকার হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। সেসময় তার মা বাদী হয়ে থানায় ধর্ষক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। সেসময় পুলিশ ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা করে। তবে যথাসময় ও ঘটনাকালীন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করতে না পারায় ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এদিকে, ঘটনার পর মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু আর সুস্থ হয়ে উঠেনি।
এ বিষয়ে উলাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ আইনাল হক জাগো নিউজকে জানান, মেয়েটি একই গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়। এরপর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তারা তৎপর হলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় থানায় মামলা হয়। ওই ঘটনার পর মেয়েটি আর সুস্থ হয়নি।
রামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য কবির হোসেন জাগো নিউজকে জানান, অভিযুক্ত মিলন ও সোনিয়াদের বাড়ি পাশাপাশি। মিলনের ভাবি সোনিয়াকে ঘরের মধ্যে তার (মিলন) জন্য খাবার পানি নিয়ে যেতে বলেন। এসময় সোনিয়া পানি নিয়ে ঘরে গেলে মিলন তাকে ধর্ষণ করেন। তখন সোনিয়া অজ্ঞান হলে তিন থেকে চার ঘণ্টা তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়। পরে কোনোরকম জ্ঞান ফিরলে তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে চোখে চোখে রাখেন মিলনের পরিবার। যাতে বাইরের কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারেন। কিন্তু গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশ হলে তারা গ্রাম পর্যায়ে সালিশ বৈঠক করার জন্য উদ্যোগ নেন। আর বৈঠকের দিন দুপুরে অভিযুক্তরা গোপনে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শে গ্রামবাসী থানায় মামলা করেন। এসময় জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে এ খবর প্রকাশিত হয়।
ইউপি সদস্য কবির হোসেন আরো বলেন, ধর্ষণের পর থেকে মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হয়। তাকে স্থানীয় বাগআঁচড়া ক্লিনিক, শার্শা উপজেলার নাভারণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এখানেও অবস্থার উন্নতি না হলে যশোর কুইন্স হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সোনিয়ার জরায়ুতে ক্ষত হওয়ায় আর সেরে উঠেনি। ফলে বাড়িতে রেখে তাকে চিকিৎসা করানো হতো।
মিলন রহমান/এমজেড/এমএস