আমাকে সংবর্ধনা দিতে বলিনিতো আপনাদের : প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী


প্রকাশিত: ০৭:১৭ এএম, ২৮ জুন ২০১৫

মালয়েশিয়ায় দলীয় ব্যানারে সংবর্ধনা দেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। মন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলালেন প্রবাসীরাও। দলীয় ব্যানারে সংবর্ধনা দেয়ায় প্রবাসীদের মাঝে চলছে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ বলছেন একটি দেশের মন্ত্রী যদি জাতীয় ইস্যু নিয়ে বিদেশ সফর করেন এবং ওই সফরে  দেশের কল্যাণ বয়ে আনেন তখন দেশের নাগরিকরা সফল কাজের জন্য দল মত নির্বিশেষে মন্ত্রীকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। সেটা না করে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ দলের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের পাশাপাশি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিয়েছে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্যতো আপনাদেরকে বলিনি। কুয়ালালামপুরের গ্র্যান্ড সেশন্স হোটেলের বলরুমে শনিবার সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠান ও সংবর্ধনার আয়োজন করে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ।

মন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া জানতে মালয়েশিয়া জাতীয় পার্টির সভাপতি এস এম রহমান পারভেজ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল কমিউনিটির পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে এসে দেখি দলীয় ব্যানারে দেয়া হচ্ছে সংবর্ধনা। সংবর্ধনার আগের দিন ইফতারের পর হোটেল পালিতায় দলমত নির্বিশেষে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কমিউনিটির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়ার। তিনি বলেন, মন্ত্রীকে নয় গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটিকে অপমান করা হয়েছে।

এদিকে মন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগ নেতাকর্মী স্লোগান না দেওয়ায় ও বক্তব্যের সময় সিটে বসা নিয়ে দুই কর্মীর বাকবিতণ্ডা ও মারামারির দৃশ্য দেখে মন্ত্রী বলেন, ডেকে এনে কেন অপমান করছেন? আমি আওয়ামী লীগের নয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী। কমিউনিটির পক্ষ থেকে না দিয়ে কেন আমাকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে?

এসময় মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এম রেজাউল করিম রেজা তার বক্তব্যে বলেন, আমরা চেয়েছিলাম কমিউনিটির ব্যানারে অনুষ্ঠান করতে, কিন্তু পারিনি। কারণ, মালয়েশিয়ায় বিএনপি সমর্থকরা অনুষ্ঠান পণ্ড করার পায়তারা করছিল বিধায় সেটা না করে দলীয় ব্যানারে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রেজাউল করিম রেজার বক্তব্য শুনে মন্ত্রী আরোও ক্ষেপে যান। তখন রেজাউল করিম হাতজোর করে ক্ষমা চেয়ে তার ভুল স্বীকার করে ফের বক্তব্যের অনুরোধ করলে মন্ত্রী বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় যাতে বেশি লোক পাঠানো যায় সেজন্য আমি চেষ্টা করছি। জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতি ছিল মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত। আর এখন বিটুবিও (বিজনেস টু বিজনেস) মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্তেই বাংলাদেশ থেকে আগামী তিন বছরে ১৫ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে ঈদের পর ঢাকা আসছে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন খাতের দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী চাহিদা পূরণে কয়েকটি ধাপে ১৫ লাখ শ্রমিককে বাংলাদেশ থেকে আনা হবে।   মন্ত্রী বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া এবং পর্যায়ক্রমে ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া। তবে যারা মালয়েশিয়ায় বর্তমানে অবৈধভাবে কাজ করছেন তারা এই সুযোগ পাবেন না।

এজন্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে ঈদের পর পরই একটি মালয়েশীয় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে এবং তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে তারা লোক আনবে।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে যখন মন্দা চলছিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শ্রমবাজারের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধ করেছে।
 
এদিকে ২৫ জুন বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া মালয়েশিয়ার কয়েকটি কোম্পানির মালিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন মালয়েশিয়া সফররত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাই কমিশনার মোহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, হাই কমিশনের বিরুদ্ধে আপনাদের অনেক অভিযোগ আছে, যার ৯০ ভাগ সত্য। তবে আমি চাই দেশের স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে।

এদিকে ২৫ জুন বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া মালয়েশিয়ার কয়েকটি কোম্পানির মালিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন মালয়েশিয়া সফররত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২৫ জুন হোটেল রয়াল চুলানে  মন্ত্রীর এই মতবিনিময় সভায় ৮০টি মালয়েশিয়ান কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ৬৮ টি কোম্পানির মালিক প্রতিনিধি উপস্থিত হয়।

নতুন অনলাইন প্রক্রিয়াটি যত্ন সহকারে পরীক্ষা করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠাতে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানালে তাতে তিনি সম্মতি জানান।
 
এদিকে বাংলাদেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরের জন্য দু` দেশের সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সুশীল সমাজ। তবে অবৈধদের বৈধতার ব্যাপারে সমস্যা সমাধান বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।

এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর কাজে সিন্ডিকেট করছেন এমন অভিযোগ করে প্রবাসীরা বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে যাতে বিটুবির পরিবর্তে কোনো দলের চুক্তিতে পরিণত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।
     
এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।