প্রতিবন্ধী নিপা বোঝা হতে চান না


প্রকাশিত: ০৮:২২ এএম, ২৫ জুন ২০১৫

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের বেজগাঁও গ্রামের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে প্রতিবন্ধী নিপা আক্তার। বয়স তার ১৮ বছর। বাবা দেলোয়ার হোসেন পেশায় একজন কৃষক। তার ২ সন্তানের মধ্যে নিপা বড়। জন্ম থেকে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী।

নিপার উচ্চতা প্রায় ২ ফুট। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না তিনি। চলাফেরা করেন হামাগুড়ি দিয়ে এবং অন্যের সাহায্যে। প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে প্রতিবন্ধিতা তাকে দমাতে পারেনি। নিপা এইচএসসি পাস করেছেন। এবার তিনি ডিগ্রিতে (স্নাতক) ভর্তি হবেন। তার আশা দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে মানুষের সেবা করা এবং নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী রোজগার করে আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা। নিপা কারও বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে চান না।

তাই তিনি নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ছোট্ট একটি পাঠশালা। ঘরের বারান্দায় বসে ৩ শিফটে ৩য় থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়িয়ে আসছেন।  

১৯৯৫ সালে কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমূল ইউনিয়নের বেজগাঁও গ্রামে তার জন্ম। নিপা বেজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। পরে নওয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসপি পাস করেন। হেঁটে চলাফেরা করতে না পারায় তার সহপাঠীরা কোলে করে বিদ্যালয়ে আনা নেয়া করতো। এসএসসি পাস করার পর বাবা দেলোয়ার হোসেন লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চান। কিন্তু নিপার ইচ্ছার কাছে হার মানতে হয় সবাইকে।

নিপা ভর্তি হন কেন্দুয়া ডিগ্রি কলেজে। ওই কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। এসএসসি পাস করার পর থেকেই বাড়িতে আশপাশের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে তিনি নিজের লেখাপড়া এবং অন্যান্য খরচ জোগাড় করে আসছেন। নিজের পড়ার পাশাপাশি তিনি গ্রামের ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়ান। আজ পর্যন্ত লেখাপড়ার খরচের জন্য তার বাবার কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নিতে হয়নি বলে জানান নিপা।

নিপা জাগো নিউজকে জানান,  আমি নিজের যোগ্যতায় কর্ম করে সমাজের অন্য দশজন মানুষের মতো বেঁচে থাকতে চাই। কারও বোঝা হতে চাই না। নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালাই।

নিপার বাবা দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকে নিপা খুব জেদি এবং লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী। এসএসসি পাস করার পর লেখাপড়া না করতে বলেছিলাম। কিন্তু তার কান্নাকাটির জন্য পারলাম না। তার ইচ্ছার কাছে আমাকে হার মানতে হয়েছে। তার লেখাপড়ার খরচ নিজেই প্রাইভেট পড়িয়ে যোগাড় করছে। প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও নিপা আজ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।