তিস্তায় ভাসছে ইলিশ!


প্রকাশিত: ০২:৫৪ পিএম, ২৪ জুন ২০১৫

পদ্মার ইলিশ তিস্তায় ভাসছে এমন খবরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ভারতে। মঙ্গলবার তিস্তা নদীতে ইলিশ মাছের একটি প্রজাতি ভাসতে দেখে ভারতের জলপাইগুড়ির মানুষ। সেটাকে ইলিশ বলেই ভেবেছিলেন স্থানীয়রা। মাছগুলো দেখে ইলিশ ভাবাই স্বাভাবিক। তবে স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ওই মাছ ইলিশ নয় ‘টেনিওয়ালোসা’ গোত্রের ‘টোলি’ মাছ। এই গোত্রভুক্ত মাছ ইলিশও। খবর আনন্দবাজারের।

মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির দুই নম্বর স্পারের কাছে দুটি বড় মাপের টোলি মাছ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা মৎস্য দফতরে খবর দেন। মাছ দুটি পরীক্ষার জন্য পানি থেকে তুলে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা পার্থসারথি দাস বলেন, ‘ইলিশ গোত্রভুক্ত মাছ টোলি। অনেকে এটাকে ইলিশ বলে ভুল করেন। রূপে ও স্বাদে এই মাছ ইলিশের মতো। ডিম ছাড়ার জন্য এরা মিঠা পানিতে আসে। হলদিবাড়ি সংলগ্ন বেলতলির কাছে ওই মাছ পাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গের নদীতে টোলি প্রজাতির ইলিশ রয়েছে। কোচবিহার জেলার বলরামপুরে তোর্সা নদীতে ওই ইলিশ পাওয়া যায়। এটা নিজেও দেখেছি।’

তবে ভারতের মৎস্য দফতরের বিজ্ঞানীরা জানান, সমুদ্রের মাছ হলেও টোলি কী করে তিস্তায় এসে পড়ল তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। ভারতের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান তথা মৎস্য বিশেষজ্ঞ সুদীপ বরাট বলেন, ‘তিস্তার জলে টেনিওয়ালোসা গোত্রের টোলি প্রজাতির ইলিশের সন্ধান মেলা মোটেও আশ্চর্যের নয়। আমরা অনুসন্ধান চালিয়ে কোচবিহারের কালজানি নদীতে ওই মাছের খোঁজ পেয়েছি।’ তার কথায়, ‘এখন জল বাড়ছে। আত্রেয়ীর মাধ্যমে তিস্তায় তাই এই মাছ চলে আসতে পারে।’

দুই নম্বর স্পার এলাকার স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে মাছ ধরতে গিয়ে ইলিশের মতো দেখতে প্রায় এক কেজি ওজনের টোলি মাছ ভাসতে দেখা যায়। জেলা মৎস্য দফতরের কর্মকর্তা গৌতম সাহা জানান, তিন দিন আগে মাছ দুটি ভেসে উঠতে পারে। বর্ষার মওসুমে ইলিশের মতো টোলি প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়তে মিঠা পানির খোঁজে তিস্তা নদীর উপরের দিকে উঠে আসে। কিন্তু জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকায় এই প্রথম মিলেছে।

শুধু টোলি নয়। কাজলি, চাপিলা, বাছারের মতো বাংলাদেশের নদীর মাছ তিস্তার পানিতে মিলছে বলে জানান দুই প্রবীণ মৎস্যজীবী দীনবন্ধু বাড়ই এবং গিরীশচন্দ্র ব্যাপারী। দীনবন্ধু বাড়ই বলেন, ‘১৯৬৮ সালের বন্যার আগে তিস্তার জলে মাঝে মধ্যে ইলিশ উঠত। বন্যার পরে আর দেখা মেলেনি। তবে ইদানিং চাপিলা, কাজলি, বাছার মাছ মিলছে। ওই মাছ সাধারণত বাংলাদেশের নদীতে পাওয়া যায়। এখন জালে ভালই উঠছে।’

জেলা মৎস্য দফতরের কর্মকর্তারা জানান, করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত ছিল তিস্তা। ১৭৮৭ সালে বিধ্বংসী বন্যায় তিস্তা গতিপথ পাল্টে অধুনা বাংলাদেশের লালমনির হাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম হয়ে চিলামারি নদী বন্দরের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলেছে। গতিপথ পরিবর্তনের ফলে সিকিমের ৭ হাজার দুশো মিটার উঁচু হ্রদে উৎপন্ন ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর বাস্তুতন্ত্রের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। আগে গঙ্গা হয়ে ইলিশ তিস্তার মিঠা পানিতে ঢুকে পড়ত। গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় তিস্তায় ওই মাছ বিরল হয়েছে।

এসএইচএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।