বাতাসে মিলিয়ে গেছে ফরমালিন!


প্রকাশিত: ০৮:৩২ এএম, ২৩ জুন ২০১৫

দেশের বাজারের ফলমূল ও খাদ্যসামগ্রীতে ফরমালিন নেই! অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালে মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেইফটি ল্যাবরেটরিটি উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ফলমূল ও খাদ্যসামগ্রীতে ফরমালডিহাইড শনাক্ত করতে দুই শতাধিক নমুনা পরীক্ষা করা হলেও পরীক্ষায় কোনটিতেই ক্ষতিকর ফরমালিনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের নমুনার মধ্যে ছিল আম, তরমুজ, লিচু, আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, কলা, তরমুজ, খেজুর ও আনারস।

এছাড়া খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল শুঁটকি, কনডেন্সড মিল্ক, প্যাকেট দুধ, কই,  রুই, তেলাপিয়া ও চিংড়ি মাছ, সেমাই, দই,  জুস ও মাছের খাবার ছিল অন্যতম।

সবগুলো নমুনাই ফরমালডিহাইড শনাক্তকরণে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অত্যাধুনিক এইচপিএলসি (হাই পারফরমেন্স লিকুইড ক্রোমোটোগ্রাফি) মেশিনে পরীক্ষা করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একজন ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, তারা মোট ২৩২টি নমুনা পরীক্ষা করলেও কোনটিতেই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ফরমালিন পাননি।

সামান্য পরিমান ফরমালডিহাইড পাওয়া গেলেও তা প্রাকৃতিক (ন্যাচারাল) অর্থাৎ বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফরমালডিহাইড বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। ফলমূল ও খাবারে আলাদা করে ফরমালিন মেশানোর প্রমাণ তারা পাননি বলে জানান। তবে ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, একটি কোম্পানি ছাড়া সব কোম্পানির  লাচ্ছা সেমাইতে ফরমালডিহাইডের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

এ সব নমুনা এফবিসিসিআই, আইইডিসিআর, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জনস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরি, বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন ও মোবাইল কোর্টের বিচারকের কাছ থেকে পাওয়া যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ১৭০ পিপিএম (পাটর্স পার মিলিয়ন), ইউরোপিয়ান ফুড সেইফটি অথরিটি (ইএফসিএ) ১০০ পিপিএম ও থাইল্যান্ডের মাহিদুল বিশ্ববিদ্যালয়ও ১০০ পিপিএম  পর্যন্ত ফরমালিনের পরিমাণকে স্বাভাবিক বলে নির্ধারণ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রচলিত বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্য আইন-২০০৫ এ বলা হয়েছে ফলমূল বা খাবারে কোন প্রকার  ফরমালিনের উপস্থিতি থাকা চলবে না। তবে সেখানে ফরমালিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত হবে তা বলা হয়নি। তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবে বাতাসে যে পরিমান ফরমালিন থাকে, তা থাকলে কি হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। ফলে ফরমালিন চিহ্নিতকরনের বিষয়টি এখনও তাই অস্পষ্টই রয়ে গেছে।

গত দুই তিন বছর যাবত বিভিন্ন ধরনের ফলমুল ও খাবারে এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়িরা ইচ্ছেমতো ফরমালিন মিশিয়ে বিক্রি করছে বলে ব্যাপক অভিযোগ ছিল।

গতবছর ভেজালবিরোধী অভিযানকালে ফরমালিন মিশ্রিত ফলমূল ও খাবার বিক্রির অভিযোগে বিপুল পরিমান ফলমূল ধ্বংস ও খাবার জব্দ করা হয়। ফরমালিন মিশ্রিত ফলমুল ও খাবার বিক্রির অভিযোগে জেল জরিমানাও আদায় করা হয়েছে।

পুলিশ যে যন্ত্রটি দিয়ে ফরমালিন পরীক্ষা করছিল সেটির সাহায্যে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফরমালিন চিহ্নিত করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে তা জানিয়ে ব্যবসায়ীরা উচ্চ আদালতে রিট করে।

আদালত থেকে ফরমালিন শনাক্ত করতে উপযুক্ত মেশিন খুঁজে বের করে সে সম্পর্কে জানাতে স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেয়া হয়। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. জাফরউল্ল্যাহকে সভাপতি করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটিতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিআইআরসি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং  ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

কমিটির সদস্যরা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেছেন, বর্তমানে দেশের বাজারে ফরমালিন শনাক্তকরণে বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত মেশিনের কোনোটি দিয়েই শতভাগ নির্ভুলভাবে ফরমালিন শনাক্ত করা যায় না। কেবলমাত্র এইচপিএলসি (হাই পারফরমেন্স লিকুইড ক্রোমোটোগ্রাফি) মেশিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই কেবলমাত্র সঠিকমাত্রায় ফরমালিন শনাক্ত করা সম্ভব।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. জাফরউল্ল্যাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফরমালিন নিয়ে এতো হৈ চৈ হলেও ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় ক্ষতিকর ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এমইউ/এআরএস/এসআরজে/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।