চরম বিদ্যুৎ সঙ্কটে রাঙ্গামাটিবাসী : বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও
পবিত্র মাহে রমজান মাসেও চরম বিদ্যুৎ সঙ্কটে নাকাল রাঙ্গামাটিবাসী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যা একেবারে অসহনীয়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ লোডশেডিং, লো ভোল্টেজ ও বিভ্রাটসহ নানা ত্রুটি এবং কারণে অকারণে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া অতিষ্ঠ করে তুলেছে জেলাবাসীকে।
রোববার জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিবাদে এবং নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করেছেন এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা। ওই সময় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের একটি কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখেন তারা। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীপ্তিমান চাকমার মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
জানা যায়, বাঘাইছড়িতে অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিবাদে এবং নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে সকালে মারিশ্যা আবাসিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে রাখা হয়।
এদিকে রাঙ্গামাটি শহরে অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রায় সময় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে শহর এলাকা। এতে অতিষ্ঠ শহরবাসী। সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, একদিকে যেমন কাপ্তাই হ্রদের পানি কমায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সঙ্কট চরমে পাশাপাশি ঘন ঘন লোডশেডিং ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শহরে বিরামহীন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যেই লেগে থাকে। এছাড়া রয়েছে অসহনীয় লো ভোল্টেজ। রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিতরণ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে শহরবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। শহরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন।
রাঙ্গামাটি শহরে বিরামহীন বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান মৌসুমে উৎপাদন সঙ্কটে চাহিদা অনুসারে রাঙ্গামাটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হঠাৎ ফল্ট দেখা দেয়। পাশাপাশি কোথাও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সেগুলোর সংস্কারতো রয়েছেই। যান্ত্রিক ত্রুটি দূর করা না গেলে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব হবে না। বিষয়টির উন্নয়নে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতার কারণে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সচল একটি ইউনিট দিয়ে বর্তমানে পিক-আওয়ারে রেশনিং পদ্ধতিতে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০-৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। অন্যদিকে কাপ্তাইয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। ফলে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে বঞ্চিত জেলার জনগণ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর ৭৮ দশমিক ৪৬ এমএসএল। অথচ এ মৌসুমে হ্রদে পানির স্তর থাকার কথা ৮২ দশমিক ২৬ এমএসএল। হ্রদে পানির স্তর অস্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটিতি দেখা দিয়েছে।
সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআইপি