যে যুদ্ধ পাল্টে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি

কাওসার বকুল
কাওসার বকুল কাওসার বকুল , সহ-সম্পাদক, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৭

পাক্কা ৪৪ বছর আগের ঘটনা। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ইসরায়েল, মিসর আর সিরিয়ার মধ্যে। যে যুদ্ধের ফলে নতুন বাস্তবতা অবলোকন করে আরব বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি একেবারে বদলে যায়।

কিন্তু কেন যুদ্ধে জড়াল দেশ তিনটি? যুদ্ধ ১৯৭৩ সালে শুরু হলেও তার ভিত্তি গড়ে উঠেছে ছয় বছর ধরে। ১৯৬৭ সালে মিসর, জর্ডান এবং সিরিয়া মিলে ইসরায়েলের সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

ছয়দিনের ওই যুদ্ধের জেরে দেশ তিনটির বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে সেনাবাহিনী হামলা চালায়। ১৯৬৭ সালে হারের বদলা নিতেই ছয় বছর পর যুদ্ধে জড়ায় মিসর এবং সিরিয়া।

middle-east-2

ঠাণ্ডা লড়াইয়ে আরব দেশগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া এবং ইসরায়েলের পিছনে বরাবরই নির্ভরতার হাত দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এবং সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ গোপনে সিদ্ধান্ত নেন উভয়ের সেনাবাহিনীকে এককাতারে নিয়ে আসবেন।

ইহুদিদের পবিত্র দিন ইয়ম কিপুরের সময় ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলে আরব জোট অতর্কিত হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে।

৬ অক্টোবর ১৯৭৩ সাল। সেদিন ছিল শনিবার। দুপুর ২ টার পরপরই মিসর এবং সিরিয়ার সেনাবাহিনী সোভিয়েতের কাছ থেকে কেনা ভারী অস্ত্র নিয়ে দু'দিক থেকে হামলা চালায় ইসরায়েলের উপর।

বদরে অভিযান চালানোর পর সুয়েজ খাল পার হয়ে বার লেভ লাইন দখলে নেয় মিসরের সেনারা। মিসর সেনাবাহিনীর সেই সফলতাকে ২৫ বছরের জয় বলে উল্লেখ করা হয়।

সিরিয়ার সেনাবাহিনীও উত্তরাঞ্চল দখল করতে থাকে। কিন্তু তিন দিনের মধ্যেই ইসরায়েলিরা সিরিয়ানদের যুদ্ধবিরতি রেখার বাইরে পাঠাতে সক্ষম হয়।

এরপর ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার অভ্যন্তরে চারদিনব্যাপী পাল্টা হামলা চালায়। ইসরায়েলি গোলন্দাজরা এক সপ্তাহের মধ্যে দামেস্কের উপকণ্ঠে গোলাবর্ষণ শুরু করে।

মিত্রের কথা চিন্তা করে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত পুনরায় হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই এই আক্রমণ ঠেকানো হয়। উল্টোদিকে ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ করে বসে। তারা দক্ষিণ ও পশ্চিমে কায়রোর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

ইসরায়েল নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নেয় ২৪ অক্টোবর নাগাদ। মিসরের থার্ড সেনাবাহিনী এবং সুয়েজ শহর ঘিরে ফেলতেও সক্ষম হয়। উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় যুক্তরাষ্ট্র এবং তৎকালীন সোভিযেত ইউনিয়নের মধ্যে। যুদ্ধবিরতি হয় ২৫ অক্টোবর।

১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে মিসরকে সিনাই উপদ্বীপ ফিরিয়ে দেয়া হয়। আর সে সময়ই প্রথমবারের মত কোনো আরব রাষ্ট্রকর্তৃক ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে মিসর।

যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং মিসরের প্রেসিডেন্টকে ওয়াশিংটনে আসার আহ্বান জানান। পরে তিন নেতা মিলে ওয়াশিংটনে বসে ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালেই শান্তি চুক্তি করেন। ১৯৭৯ সালের মার্চে ওয়াশিংটনেই দেশ দুটির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

১৯৯২ সালে জর্ডানও ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে যায়। ফলে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুনভাবে পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করতে হয়।

সূত্র : আল জাজিরা

কেএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।