রোহিঙ্গা সংকট : নিরাপত্তা পরিষদের দিকে নজর বিশ্বের
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধন বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবার কী সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকেই নজর এখন গোটা বিশ্বের। শান্তিকামী রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যাশা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় নিরাপত্তা পরিষদ ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবে।
বৃহস্পতিবার উন্মুক্ত বিতর্কে মিলিত হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হবে। লাখো লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দানকারী রাষ্ট্র বাংলাদেশও এই ইস্যুতে তার প্রস্তাব ও অবস্থান তুলে ধরবে। জাতিসংঘের ৭২ তম অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে নিউইয়র্ক রয়েছেন।
নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এ নিয়ে এক মাসে তিন দফা বৈঠকে হচ্ছে। এর আগেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দফা আলোচনা হয়েছে।
সর্বশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এতে দীর্ঘ ৯ বছর পর নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এক বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে জাতিসংঘ সদর দফতরে নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বৈঠকের আগে প্রস্তুতিমূলক এ রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটিশ উপরাষ্ট্রদূত জোনাথন অ্যালেন বলেছেন, সহিংসতা যাতে বন্ধ হয়, সেজন্য মিয়ানমারকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে।
মিয়ানমার সরকার ও দেশটির নিপীড়ক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ আশা করছেন সবাই। কিন্তু চীনসহ দু-একটি দেশের ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে এ প্রত্যাশা কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চাপ তীব্রতর করতে একযোগে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। জানা গেছে, নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরবে। জাতিসংঘে কর্মরত একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক জানিয়েছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছে বাংলাদেশ। এজন্য নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্রটি তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
মিয়ানমারের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর ওপর চাপ তীব্রতর করতে একযোগে কাজ করার জন্য আলোচনা শুরু করেছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। দুটি দেশ চাচ্ছে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন বন্ধ করতে।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড সোমবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য না হলেও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে কানাডার রয়েছে ব্যাপক প্রভাব।
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডিবাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল জেনেভায় ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, দ্রুত সেটার সমাধান হওয়া দরকার। তবে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে দেওয়া হবে কি না, সেটা এখন ‘বড় প্রশ্ন’।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, সমস্যাটির সমাধান না হলে ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক অনেক বেশি।
একে/আরআইপি