রোহিঙ্গাদের দেখতে সু চিকে বাংলাদেশে আসার আহ্বান জাতিসংঘের
বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে এসে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের উপর চলা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতা সম্পর্কে জানার জন্য শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার সাতজন বিশেষজ্ঞ। মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের এক বিবৃতিতে তারা মিয়ানমার সরকার ও সু চির প্রতি এ ধরনের আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে এই সাতজন বিশেষজ্ঞ সু চির প্রতি আরও আহ্বান জানান, বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান সহিংসতা যেন মিয়ানমার সরকার অবিলম্বে বন্ধ করে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের লঙ্ঘনের। তার মধ্যে ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও রোহিঙ্গদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা এবং তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া অন্যতম। অগ্নিসংযোগ ও তাণ্ডবের শিকার হয়েছে ১০ হাজার বাড়িঘর। ২৫ আগস্ট তল্লাশি চৌকিতে হামলার জেরে তো আর সব রোহিঙ্গা খেসারত দিতে পারে না।
তারা আরও জানান, মিয়ানমারের পরিস্থিতি অনুধাবনের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর দেয়া ভাষণে সু চি আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি। যদও গত এক মাসে চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
রাখাইন রাজ্য ও কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তারা সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সু চি যদি সত্যিই কিছু না জেনে থাকেন এবং তিনি যদি মানবিক হন, তাহলে যেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কথা শোনেন।
সু চির বক্তব্যের পরও রাখাইন রাজ্য ছেড়ে প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত পালিয়ে আসা চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে দুই লাখ ৪০ হাজার শিশু রয়েছে।
এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। বিপুলসংখ্যক এই জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চায় দেশটি। বাংলাদেশের কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরেই রয়েছে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কূটনীতিক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে তিনি তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি।
শিগগিরই বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবে না বলেও মনে করছেন অনেকেই। লন্ডনের ছাথাম হাউস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ইনস্টিটিউটের প্রধান চম্পা পাটেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, বাংলাদেশ একা কোনোভাবেই এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবে না।
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গারা ঘনবসতিপূর্ণ, দরিদ্র এলাকা থেকে ঐতিহাসিকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে এসেছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে, সেটাকে স্বাগত জানাই। তবে সঙ্কট সমাধানের তেমন কোনো অগ্রগতি আপাতত চোখে পড়ছে না।
রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে পর্যাপ্ত খাবার, পানি কিংবা ওষুধের ব্যবস্থা নেই। পরিধেয় কাপড়, স্যানিটেশনের অভাবে ইতোমধ্যেই সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছে রোহিঙ্গারা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে যে কোনো সময় মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
কেএ/আইআই