টপলেস ত্যাগ করছেন ফরাসি মহিলারা
ফ্রান্স কেন, গোটা ইউরোপ জুড়ে অনেক দেশে এবারকার গ্রীষ্মটাকে ঠিক গ্রীষ্ম বলা চলে না। সেই সঙ্গে আরেকটা চমকে ওঠার মতো খবর: হালফ্যাশানের ফরাসি মহিলারা নাকি অনাবৃত বক্ষে সূর্যস্নান করাটাকে অসভ্য বলে মনে করেন। অথচ এই ফ্রান্সে কিছুদিন আগেও সমুদ্রসৈকতে মহিলাদের ল্য টপলেস ছাড়া কল্পনাই করা যেত না। কিন্তু নারীবাদের পথিকৃৎ এল ম্যাগাজিনের একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে, ৩৫ বছরের কম বয়সের ফরাসি মহিলাদের মাত্র দুই শতাংশ আজও জনসমক্ষে বক্ষদেশ উন্মুক্ত করতে রাজি। অর্থাৎ ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরায় ব্রিজিট বার্ডো-র কায়দায় অর্ধনগ্নতার যুগ বোধহয় সত্যই শেষ হয়েছে কিংবা শেষ হতে চলেছে।
ফরাসি মহিলাদের নাকি সংকোচ বেড়েছে। নগ্নতাকে আজকাল নাকি ভালগার, অর্থাৎ অশিষ্ট কিংবা ইতর বলে বিবেচনা করছেন ফরাসি মহিলারা। সেখান থেকে যদি ফেরা যায় গত শতাব্দীর ষাটের দশকে, তাহলে শোনা এবং দেখা যাবে আরেক কাহিনি ও দৃশ্য: নারীবাদকে সেক্সি করার লক্ষ্যে কোট দাজুর, বা নীল সৈকতে টপলেস হয়েছিলেন অভিনেত্রী ব্রিজিট বার্ডো। যুক্তি ছিল: পুরুষদের যখন ওপরে কিছু পরতে হয় না, তখন মহিলাদেরই বা পরতে হবে কেন? খোদ ভ্যাটিকান থেকে আপত্তি উঠেছিল সেবার। ফ্রান্স কিন্তু রক্ষণশীলদের সোচ্চার প্রতিবাদ সত্ত্বেও তথাকথিত মোনোকিনিকে নিষিদ্ধ করতে অস্বীকার করে: এ ছিল সত্তরের দশকের ঘটনা। তাহলে পঞ্চাশ বছর পরে আজ যে ল্য টপলেসের মৃত্যু ঘটতে চলেছে, সেটা কি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক?
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ও আর কিছু নয়, ফ্যাশন বদলে গেছে, তাই টপলেসও উধাও হচ্ছে। হালের ফ্যাশান হলো পূর্ণাঙ্গ, ওয়ান-পিস সুইমস্যুট যাতে নজরটা যায় নিতম্বের দিকে। সমাজতত্ত্ববিদরা কিন্তু বলছেন, টপলেস-এর অন্তর্ধানের অর্থ, ফরাসি মহিলারা নারীবাদের অর্জন বিস্মৃত হতে বসেছেন। নারী স্বাধীনতা অর্জন করার পর আজকের মহিলারা গতানুগতিকতার অনুগামী, এমনকি অলস হয়ে পড়েছেন। উগ্র নারীবাদীদের প্রজন্ম আজ প্রবীণ, অপরদিকে তথাকথিত মিলেন্নিয়াম জেনারেশন পুনরায় প্রথাগত রক্ষণশীল মূল্যবোধের দিকে মোড় নিয়েছে।
সমাজতত্ত্ববিদদের পরে আসছেন মনস্তত্ত্ববিদরা। তাঁরা বলছেন, ইউরোপে আর্থিক সংকটই টপলেসের অকালমৃত্যুর কারণ। বক্ষ অনাবৃত করার অর্থ ঝুঁকি নেওয়া, বিপ্লব করা, সেক্ষেত্রে এই মাগগিগণ্ডার বাজারে সব কিছু রেখে-ঢেকে রাখাটাই নিরাপদ! এল ম্যাগাজিন বলছে, মহিলাদের টপলেস বর্জন করার আসল কারণ হলো স্কিন ক্যানসারের ভয়! শেষ একটা কারণ দেখানো যেতে পারে এবং দেখানো হয়েছে: মহিলারা শান্তিতে সূর্যস্নান করবেন কোথায়, যদি পুরুষরা সর্বত্র ফোন ক্যামেরা হাতে উঁকিঝুঁকি মারেন?
সূত্র: ডয়েচে ভেলে