বিশ্বের কাছে একজন রোহিঙ্গা রাশিদার বার্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪৯ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

২৫ বছর বয়সী রাশিদা, নয়দিন আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছেড়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।

‘আরাকানে নিধনযজ্ঞ শুরুর আগে একেবারে শান্তশিষ্ট এবং সাধারণ জীবন কাটছিল আমার। কিছু জায়গা-জমিও আমরা চাষাবাদ করতাম; আর স্বামী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করতাম। সেটা একেবারেই শান্তিপূর্ণ ছিল; সঙ্কট শুরুর আগ পর্যন্ত আমরা খুব সুখী ছিলাম।’

‘সে সবকিছু অতীত এখন। আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে আর বসবাস করা আমাদের পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।’

‘সেনাবাহিনী যখন আমাদের গ্রামে নিধনযজ্ঞ শুরু করল, বাচ্চাদের নিয়ে চটজলদি আমি জঙ্গলে আশ্রয় নিলাম। তারা বন্যহাতির চেয়েও বিপজ্জনক। সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর যখন আমরা গ্রামের মধ্যে আসলাম; আমাদের চোখের সামনে তখন গ্রামের অন্যদের সারি সারি মরদেহ পড়ে অাছে। সেনাবাহিনী তাদের গুলি করে হত্যা করেছে।’

‘সীমান্ত পার হয়ে আসার আগে আমরা আটদিন জঙ্গলে কাটিয়েছি। এখন অামরা খুবই ক্ষুধার্ত; গাছের পাতা খাওয়া ছাড়া আমাদের কাছে বিকল্প নাই। আমার তিন শিশুই বারবার খাবারের কথা বলছে; কিন্তু আমরা খাবার মতো তেমন কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি, কেবল তিন শিশু ছাড়া।’

‘ছোট একটা নৌকায় চড়ে আমরা সীমান্ত পার হয়েছি। এটা খুবই বিপজ্জনক এবং পার হওয়ার সময় বার বার মনে হয়েছে নৌকাটি ডুবে যাবে। সে কারণে বাচ্চাদের কেউ যাতে ভেসে না যায়, সেজন্য তাদের একসঙ্গে বেঁধে রেখেছিলাম।’

‘কিন্তু বাংলাদেশে এসে আমি মোটেও খুশি নই। আমাদের নিজস্ব পশু ছিল, এক একর ধানের জমি, একটি বাড়ি ছিল। আমাদের নিজ দেশে সুন্দর গ্রাম ছিল। সেসব ছেড়ে আমরা এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি; সুতরাং আমি নিশ্চিত আপনি ভাবতে পারেন কতটা খারাপ লাগছে।

‘আমাদের বাড়িটার কথা খুব মনে হচ্ছে; এখানে আমার অসহায় লাগছে। আমাদের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই।’

‘আমরা এখানে যথেষ্ট সমর্থনও পাচ্ছি না। বাংলাদেশের মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ-পরোপকারী। তারা আমাদের জন্য কাপড়, খাবার-দাবার দিয়েছে। কিন্তু আমি আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে এগিয়ে আসতে দেখিনি। আমার বিশ্বাস তারা আমাদের সহযোগিতা করবে। আমাদের আহারের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন।’

বিশ্বের কাছে আমার বার্তা হলো, ‘আমরা শান্তি চাই; শান্তি ছাড়া আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই।’

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে রাশিদার সঙ্গে কথা বলেন আল জাজিরার কেটি অারনল্ড। পরিষ্কারভাবে রাশিদার কথাগুলো তুলে ধরার জন্য অর্থ ঠিক রেখে সম্পাদনা করা হয়েছে।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে জীবন বাঁচাতে গত দুই সপ্তাহে দুই লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে নারী এবং শিশুর সংখ্যাই বেশি।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সেখানে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়াকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে। সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকার এবং অং সান সু চিকে চাপ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মহল। তারপরও সহিংসতা সমানহারে চলছে। বাংলাদেশে আসছে হাজার হাজার শরণার্থীর ঢল।

সূত্র : আলজাজিরা।

কেএ/এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।