এ কেমন সু চি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশায় নোবেল জয়ী ও দেশটির নেত্রী অং সান সু চির ভূমিকার তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। রোহিঙ্গা নিপীড়নে সু চির নীরবতায় লাখ লাখ রোহিঙ্গার করুণ আর্তনাদ নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ব বিবেককে; নাড়াতে পারেনি শান্তির দূত সু চিকে।

দুই সপ্তাহ দেশটির রাখাইনে নতুন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ বলছে, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলীয় রাখাইনে পুলিশি চেক পোস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর নতুন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী কঠোর অভিযানে অন্তত এক হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি চলতি সপ্তাহে দাবি করেন, প্রচুর ভুল তথ্যে উত্তেজনা উসকে দেয়া হচ্ছে। বার্তাসংস্থা এএনআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সু চি বলেন, আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে। যারা আমাদের দেশে রয়েছেন তাদের প্রত্যেকের নিরাপত্তা দিতে হবে।

৫ সেপ্টেম্বর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোন আলোচনায় একথা বলেন সু চি। জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারে কয়েক শতাব্দি ধরে বসবাস করে আসছেন। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে দশকের পর দশক ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছেন তারা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। শতাধিক জাতিগোষ্ঠীর মিয়ানমারের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি।

বিশ্বের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক ও নেতার সমালোচনার তীরে বিদ্ধ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। তার নীরব ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকেই। গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে আসা সু চি ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী হন। রাখাইন সঙ্কট শুরুর পর নতুন করে সমালোচনা ও তিরস্কারের মুখে পড়েছেন তিনি।

মালালা ইউসুফজাই

মিয়ানমারের বাড়তে থাকা সহিংসতার ঘটনায় অং সান সু চির নীরবতার সমালোচনা করেছেন শান্তিতে পাকিস্তানের নোবেলজয়ী ও শিক্ষা অধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই।

গত ৩ সেপ্টেম্বরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক টুইট বার্তায় মালালা বলেন, ‘আমি সব সময় খবর দেখি, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের কষ্টে আমার হৃদয় ভেঙে যায়।’

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে মালালা ইউসুফজাই মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান। রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের ‘মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক’ দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা জানিয়ে মালালা বলেন, আমি এখনো অপেক্ষা করছি; আমার সহকর্মী শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে একই ধরনের নিন্দা জানাবেন।

পাকিস্তানের এই নোবেল জয়ী বলেন, রাখাইনে সহিংসতার ঘটনায় সু চির নিন্দার জন্য বিশ্ব এবং রোহিঙ্গা মুসলিমরা অপেক্ষা করছে।

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তালেবানের হামলায় বেঁচে যাওয়া ২০ বছর বয়সী মালালা।

সহিংসতা এবং ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ, আশ্রয় ও শিক্ষার সুযোগ দিতে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে অনুসরণ করতে পাকিস্তানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু

দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৪ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু রোহিঙ্গা সঙ্কট দূর করতে সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রাখাইনের ভয়াবহ নৃশংসতার ঘটনায় ৭ সেপ্টেম্বর এক খোলা চিঠিতে ৮৫ বছর বয়সী টুটু রোহিঙ্গা সঙ্কটে স্নেহভাজন ছোট বোন সু চিকে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, তোমার লোকজনকে আবারও সঠিক পথে ফিরে আসার পরামর্শ দাও।

তিনি লেখেন, ‘যদি মিয়ানমারের সর্বোচ্চ অফিসে যাওয়ার রাজনৈতিক বিনিময় হয় তোমার নীরবতা, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এর মূল্য অনেক চড়া।’

‘যে দেশ শান্তিপূর্ণ নয়, সার্বভৌমত্বের মর্যাদা ও মূল্যবোধকে স্বীকার এবং রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়; সেই দেশ স্বাধীন দেশ হতে পারে না। যে দেশের নেতৃত্ব এমন এক ন্যায়পরায়ণতার প্রতীকের হাতে, সেই দেশের এমন ঘটনা আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।

অ্যান্টনিও গুতেরাস

চলমান সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটেরাস। রাখাইনে ক্রমাগত মানবিক বিপর্যয়ের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে মানবিক এ সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে বিরল এক চিঠি লিখেছেন তিনি।

তবে অং সান সু চির সরাসরি সমালোচনা না করলেও মিয়ানমারের নেতৃত্বের নিন্দা জানিয়েছেন গুটেরাস। ‘আমি মিয়ানমারের, বেসামরিক, সামরিকসহ সব কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, এই সহিংসতার অবসান করুন। আমার মতে, এমন একটি পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে যা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে তিনি বিশ্ব নেতাদের চাপ দেবেন। চলতি মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তুরস্ক রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরবে। এরদোয়ান বলেছেন, আগামী ১২ থেকৈ ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশ নিয়ে তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।

৪ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, আপনি মিয়ানমার এবং মুসলিমদের পরিস্থিতি দেখছেন...আপনি দেখেছেন কীভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে...মিয়ানমারের গণহত্যায় মানবতা এখনো নীরব।

পিটার পোফ্যাম

সু চির জীবনী ও কর্ম নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের লেখক পিটার পোফ্যাম। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় সু চিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

পিটার বলেছেন, সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ জানানোর পরিবর্তে তিনি এখন সেনাবাহিনীর পোষ্য, প্রধান। সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের জন্য দায়ী।

বোরিস জনসন

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা নিপীড়নের মাধ্যমে বার্মা তার খ্যাতি ভুলুণ্ঠিত করছে বলে দাবি করেছেন তিনি। ২ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে বোরিস জনসন বলেন, সু চি তার অসাধারণ গুণাবলি ব্যবহারের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধান করবেন বলে প্রত্যাশা করছে ব্রিটেন।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।