আজও জ্বলছে রাখাইন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০১৭

রাখাইন রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অন্তত তিনটি গ্রামে বুধবারও জ্বলছে আগুন। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের উৎখাতের জন্য আগে থেকেই সেখানে তাণ্ডব চালিয়ে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদক বুধবার রাখাইনের ওই গ্রামগুলোতে আগুন জ্বলতে দেখেছেন।

গত শুক্রবার আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কিছু তল্লাশি চৌকিতে অতর্কিতভাবে সশস্ত্র হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত একশ ১০ জন নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনীর হাতে নির্বিচারে প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

rohinga-rakhaine

কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য নো ম্যানস ল্যান্ডে অপেক্ষা করছেন। তবে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।

বুধবার দু'জন রোহিঙ্গা নারী ও দু'জন শিশুর মরদেহ ভেসে আসে বাংলাদেশে। ছোট নৌকা এবং কেউ কেউ সাঁতার কেটে নাফ নদী পার হয়ে আসতে গিয়ে তারা মারা গেছেন বলে বাংলাদেশের সরকারি একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন।

rohinga-rakhaine

বুধবারও রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামের রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। মংডোর নিকটবর্তী গ্রামের একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে।

ওই ব্যক্তি টেলিফোনে এএফপিকে বলেন, গ্রামবাসীরা এখনও পালিয়ে যাচ্ছেন ... এখন আমরা কোথায় গিয়ে বাঁচব?

rohinga-rakhaine

পালিয়ে যাওয়া কিংবা নিহত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নির্ধারণ করা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয় করাও সম্ভব নয়।

বুধবার সকালে মা য়ু নদী দিয়ে নৌকায় চড়ে যাওয়ার সময় আগুন জ্বলতে দেখেছেন এএফপির ওই প্রতিবেদক।

দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্মূলে তাদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে বলে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অভিযোগ করেছে। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত স্থিরচিত্রে দেখা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার অন্তত ১০টি স্থানে আগুন জ্বলছে।

সংস্থাটির অভিযোগ, বার্মিজ আর্মি নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। বুলেটের আঘাত থেকে শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ কাউকেই রেহাই দেয়া হচ্ছে না। গুলির পাশাপাশি বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা আর সেখানে বসতি স্থাপন করতে না পারে।

rohinga-rakhaine

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরাস রোহিঙ্গা নিধনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিকের দেয়া বিবৃতিতে উদ্বেগের বিষয়টি উঠে আসে।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরাস। গত কয়েকদিনে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ তথ্য জানিয়েছে।

আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) রোহিঙ্গাদের ফের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। কিন্তু আবাসস্থলে ফিরলে বার্মিজ সেনাদের গুলি খেয়ে মরতে হবে, এই ভয়ে সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। সেখানে খাবার ও পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

তবে সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সহায়তায় নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে যৎসামান্য খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট থেকে দ্বিতীয়বারের মত সহিংসতায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রাখাইন রাজ্য। এসব সহিংসতায় এখন পর্যন্ত আটশ রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেন এমন এক আইনজীবী আল জাজিরার কাছে এ দাবি জানিয়েছেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং ব্যাপক তাণ্ডবের মুখে গত বছর প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

এদিকে, রাখাইন রাজ্যে এআরএসএ’র সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যেটি বাংলাদেশের জন্য চরম উদ্বেগের বিষয়।

সূত্র : এএফপি

কেএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।