হেলিকপ্টারে আসবেন বিচারক, ২৮ কোম্পানি আধা-সেনা মোতায়েন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০১৭

হেলিকপ্টারে আসবেন বিচারক। আসবেন দুই সহকারী। থাকবে কড়া নিরাপত্তা। রোহতক থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে, সুনারিয়ার জেলা কারাগারেই আগামীকাল সোমবার বসবে বিশেষ সিবিআই আদলত। আর সেখানেই ঘোষিত হবে শিষ্যাকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ভারতের হিন্দু ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমের সাজা।

গত শনিবার হরিয়ানা ও পাঞ্জাব হাইকোর্টের তরফ থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার পর সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত সেখানে ৩৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শুধু রায় ঘোষণায় এই অবস্থা, সাজা ঘোষণা হলে কী হবে? আগামীকাল সোমবার সাজা ঘোষণা নিয়ে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না হরিয়ানা প্রশাসন। পঞ্চকুলা, চণ্ডীগড়কে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। দুর্গ বানিয়ে ফেলা হয়েছে রোহতককেও। ২৮ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে গোটা শহর জুড়ে।

সোমবার রোহতকের জেলেই বসবে বিশেষ সিবিআই আদালত। জেলের ভেতরে তৈরি হওয়া অস্থায়ী এজলাসে গিয়েই বিচারক জগদীপ সিংহ গুরমিত রাম রহিম সিংহের সাজা ঘোষণা করবেন।

jagonews24

হরিয়ানা পুলিশের ডিজিপি সাংবাদিকদের গতকাল শনিবার জানিয়েছেন, সাজা ঘোষণার দিন আদালতে আনা হবে না রাম রহিম সিংকে। এক্ষেত্রে দুটি রাস্তা খোলা থাকছে। এক, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রায় ঘোষণার সময় হাজির করা হতে পারে তাকে। দুই, কারাগারে বসতে পারে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। সেই আদালত আয়োজন করতে বিশেষ বিমানে উড়িয়ে আনা হতে পারে বিচারক জগদীপ সিংকে।

শনিবারই শুনানি চলাকালীন হরিয়ানা প্রশাসনকে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন হরিয়ানা ও পাঞ্জাব হাইকোর্ট। সাজা ঘোষণার দিন কারাগারেই বিচারশালা বসাতে বলা হয়েছে। সেই জন্য বিমানে উড়িয়ে আনতে হবে বিচারক জগদীপ সিং ও দুই সহকারীকে। সেখানেই ঘোষিত হবে সাজা। এই নিয়ে রোহতক জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে নির্দেশও পাঠিয়ে দিয়েছে আদালত।

সেই নির্দেশে বলা হয়েছে, সুনারিয়ায় রোহতক জেলা কারাগারে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ পাঠিয়ে কোর্টরুম আয়োজন করতে বলা হয়েছে। সেখানে যাতে আইনজীবীরা সহজে যাতায়াত করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দার্জিলিংয়ে ঘাঁটি ছিল ধর্ষক গুরুর, নাম স্ল্যাক্স বাবা

গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের ‘পদধূলি’ পড়েছিল দার্জিলিংয়েও। সমতল ছাড়িয়ে পাহাড়ে রীতিমতো জমি কিনে, সেখানে স্থায়ী ডেরা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন গায়ক, নায়ক, পরিচালক, নির্দেশক, স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিম।

jagonews24

শনিবার আদালত গুরমিতকে ধর্ষক হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করার পর উত্তাল হয়ে ওঠে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা। টিভিতে সেই ছবি দেখানো হয় ফলাও করে। পর্দায় বারবার ভেসে ওঠে রাম রহিমের মুখ। তা দেখেই চমকে ওঠেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। এ মুখ যে তাদের বেশ চেনা। বছর কয়েক এই ধর্মগুরুই তো স্ল্যাক্স পরে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতেন। তার আজব পোশাকের দৌলতে পাহাড়বাসীর কাছে তিনি ‘স্ল্যাক্সবাবা’ নামে পরিচিত ছিলেন।

ধর্ষণে জড়িয়ে যে ধর্মগুরু আজ খবরের শিরোনামে, তার আচার-আচরণ গোড়া থেকেই মুচমুচে খবর ছিল পাহাড়ে। ২০০৯ সালের মে মাসে রাম রহিম প্রথম ৫০টি গাড়ির কনভয় নিয়ে দার্জিলিংয়ে হাজির হয়েছিলেন। তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল মূলত মহিলারাই।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তার সঙ্গে ১৫০-২০০ জন রক্ষী ছিল। এছাড়া আরও ৫০ জন লোক থাকত তার আশপাশে। সকলেই ছিল হরিয়ানার বাসিন্দা। দার্জিলিং শহরের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেলেই উঠেছিলেন স্বঘোষিত এই ধমর্গুরু। তিনি যেখানেই যেতেন, তাকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় থাকত। পাহাড়ে পা রেখেই অখিল ভারতীয় গোর্খালিগের নেতা প্রয়াত মদন তামাংয়ের সঙ্গে পরিচয়পর্ব সেরে ফেলেন তিনি। মোটা টাকার বিনিময়ে বক্সিঝোরায় দুই একরের বেশি জায়গাও কেনেন। সেখানে আশ্রম গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়।

jagonews24

হরিয়ানা থেকে মিস্ত্রি, শ্রমিক এনে রাজকীয় কায়দায় আশ্রম তৈরি হতে থাকে। নির্মাণ কাজ নিজে দেখাশোনার জন্য সেখানেও দিন কয়েক ছিলেন রাম রহিম। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ‘ধষর্ক’ এই ধর্মগুরু রাস্তায় দাঁড়িয়ে অশালীন আচরণ করতেন। তার আচরণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রবল আপত্তি জানান।

এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।