ধর্ষক গুরু রাম রহিমে জ্বলছে ভারত, ৫০০ ট্রেনের যাত্রা বাতিল
বিতর্কিত গুরু ধর্ষণে অভিযুক্ত হওয়ার পর রক্তক্ষয়ী মারাত্মক দাঙ্গায় উত্তপ্ত ভারতে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে। দেশটির হরিয়ানা প্রদেশের স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিম সিং দেশটির আদালতে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ভক্ত ও সমর্থকরা ব্যাপক সহিংসতা শুরু করেন। ভক্তদের জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় হরিয়ানায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
শুক্রবার রাম রহিম সিং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শুরু। কর্তৃপক্ষ বলছে, দাঙ্গায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত কয়েকশ’ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষক গুরু রাম রহিম ভক্তদের জ্বালাও-পোড়াওয়ের আশঙ্কায় দেশটির উত্তরাঞ্চলে চলাচলকারী কমপক্ষে ৫০০ ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় রাম রহিমের হাজার হাজার অনুসারী। শুক্রবার হরিয়ানায় কারফিউ জারি করা হলেও শনিবার তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
হরিয়ানার জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা রাম নিওয়াশ ডিপিএ নিউজ অ্যাজেন্সিকে বলেন, গতকাল থেকে আমরা ৬০০ থেকে ৮০০ জনকে গ্রেফতার করেছি। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাম রহিমের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ধারাল অস্ত্র, লাঠিসোটা উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে।
সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হরিয়ানা রাজ্যে পাঁচকুলা শহরে টহল দিচ্ছে। এই পাঁচকুলা শহরেই নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছে রহিমের অনুসারীরা। তবে বিক্ষোভকারীদেরকে হটিয়ে দেয়ায় বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার।
শুক্রবারের মতো আর কোনো সহিংসতা যাতে না ছড়িয়ে পড়তে পারে সেদিকে লক্ষ্য করে নিরাপত্তাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। হরিয়ানার পাঁচকুলা, পাঞ্জাবের ভাতিন্ডা, মুকতাসর ও ফিরোজপুর শহরে কারফিউ তুলে নেয়া হলেও জন-সমাবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।
হরিয়ানা পুলিশের প্রধান বি.এস স্যান্ধু বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, মাথায় গুরুতর আহত অবস্থায় অনেকেই চিকিৎসাধীন থাকায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে তার।
তিনি বলেন, রাজ্যে অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া ৫০ পুলিশ সদস্যসহ আরো প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন। সহিংসতায় জড়িত থাকায় গ্রেফতার হতে পারেন এমন আশঙ্কায় আহতদের অনেকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেননি।
৫০ বছর বয়সী স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর ভারত এবং ভারতের বাইরে অন্তত ৬ কোটি ভক্ত আছে। ২০০২ সালে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর কাছে এক তরুণী চিঠি লেখেন। চিঠিতে গুরু রাম রহিমের আস্তানায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওই তরুণী চিঠিতে জানান, তার মতো আরো অনেক তরুণীই গুরুর প্রতি তরুণীর অন্ধ ভক্তির কারণে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
ওই চিঠির পর দেশটির কেন্দ্রীয তদন্ত ব্যুরোকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তবে ধর্ষণের শিকার তরুণীর পরিচয় খুঁজে বের করতে কয়েক বছর লেগে যায়। তবে ২০০৭ সালে ওই তরুণী প্রকাশ্যে এসে গুরু রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।
শুক্রবার হরিয়ানার পাঁচকুলার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন রাম রহিম। তাণ্ডবের শিকার পাঁচকুলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে। সহিংসতায় হরিয়ানার সিরসায় রাম রহিমের আশ্রম এলাকায়ও প্রাণহানি হয়েছে। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাম রহিমের অনেক ভক্ত বলছেন, তার এই রায়ে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছেন তারা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হরিয়ানার দোকানি রাজকুমার আল-জাজিরাকে বলেন, আমি প্রায় ১৪ বছর ধরে প্রিয় রাম রহিম সিংয়ের সঙ্গে রয়েছি। আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে, আমাদের গুরুর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবই মিথ্যা।
‘গুরু কোনো ভুল করতে পারেন না...তিনি জগতকে সকল সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে কাজ করেন।’
ভারতের বিতর্কিত এই ধর্মগুরু হরিয়ানা রাজ্য সরকার ও স্থানীয় বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পান। তার গ্রুপ ‘ডেরা সাচ্চা সওদা’র লাখ লাখ অনুসারী আছে।
২০১৪ সালে দেশটির সড়ক পরিষ্কার অভিযানে অংশ নেয়ায় রাম রহিমের ডেরা সাচ্চা সওদার প্রশংসা করে টুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মাদকবিরোধী ও নিরামিষভোজনের নীতি প্রচার করে এই গ্রুপ। সিং এই সংগঠনকে সামাজিক কল্যাণ ও আধ্যাত্মিক সংস্থা হিসাবে বর্ণনা করেন। সোমবার ধর্ষক গুরুর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে।
সূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এসআইএস/জেআইএম