১৭ বছর পর যখন দেখা হলো মায়ের সঙ্গে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:২৬ এএম, ১৮ আগস্ট ২০১৭

হানি নাদের মেরগানি আলী ২১ বছরের তরুণ, কিন্তু গত ১৭ বছরই তার কেটেছে মাকে ছাড়া। ওদিকে, ছেলের জন্য মায়ের বুকটা সর্বক্ষণ পুড়লেও ছেলেকে দেখার সুযোগ নেই।

অবশেষে, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেখা হলো মা ও ছেলের। আবেগঘন এ দেখায় মা ও ছেলে যতটা না বললেন, তার চেয়েও বেশি কাঁদলেন। কান্নাতেই এতদিনের অনেক না বলা কথা বলা হলো তাদের। সে আবেগ, সে কান্নার ঢেউ ছুয়ে গেল, কাঁদালো উপস্থিত সবাইকে।

শুক্রবার সকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ বিমানবন্দরে মা নুরজাহানের সঙ্গে দেখা হয় হানির। এ সময় সেখানে ছিলেন হানির বোন সামিরা। খবর- খালিজ টাইমসের।

মাত্র ৪ বছর বয়সেই হানিকে ভারতের কেরালা থেকে মা ও বোনের কাছ থেকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন তার বাবা, যিনি সুদানের নাগরিক। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৭টি বছর ভারতে থাকা মা ও বোনের দেখা পাননি হানি।

কিছুদিন আগে খালিজ টাইমসের এক খবরে দুবাইয়ের একটি দোকানে কর্মরত বোন সামিরার সঙ্গে হানির দেখা হওয়ার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে বিষয়টি প্রকাশ পায়।

India

শারজাহর একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হানি। গণমাধ্যমে ভাই-বোনের এ সাক্ষাতের খবর পড়ে পাকিস্তানি এক ব্যবসায়ী স্থানীয় আইন আল শাহিন ট্রেডিংয়ের কর্ণধার তালহা শাহ ভারতীয় ওই মায়ের সঙ্গে ছেলের সাক্ষাতের উদ্যোগ নেন। তিনি ভারতে থাকা হানির মা নুরজাহানের আমিরাতে আসার বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন। শুক্রবার দেখা হয় মা ও ছেলের।

ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমি ভাই-বোনের এ সাক্ষাতের খবর পড়ার পর তাদের জন্য কিছু করতে আগ্রহী হই। হানিকে খুঁজে বের করে তাকে চাকরি দিতে চাই। কিন্তু সে তখন অন্য চাকরি করছে। ফলে আমি তার মাকে এখানে আনার ব্যবস্থা করি। খবর পেয়ে মাকে দেখতে সে একমুহূর্তও দেরি করেনি।

ইসলামাবাদ থেকে আসা পাকিস্তানি ব্যবসায়ী তালহা বলেন, এটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয় নয়। এটা মানবতা। তাদের ঘটনাটি আমার হৃদয় ছুয়ে গেছে। আমি এ পরিবারের জন্য কিছু করতে চেয়েছি।

মাকে পেয়ে দারুণ উচ্ছসিত হানি। তিনি জানান, তার মায়ের থাকার জন্য তার বোনের এক বন্ধুর বাসাটি দেওয়া হয়েছে।

সামিরাও এতে দারুণ খুশি। তিনি বলেন, আমি জানিনা এতকিছু কীভাবে হলো। ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের খবরের পর হানির জন্য অনেক চাকরির প্রস্তাব আসতে লাগল। কীভাবে মাকে নিয়ে আসা হলো। যারা এভাবে আমাদের সহায়তা করেছেন তাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ।

হানির বাবা পড়াশোনা করতে কেরালা গিয়ে পরিচয় হয় নুরজাহানের সঙ্গে, এরপর বিয়ে। হানির বয়স চারের কাছাকাছি এলে স্ত্রীকে রেখে ছেলেকে নিয়ে সুদানে ফেরেন তিনি। সেখানে কষ্টে দিন কেটেছে হানির।

হানি জানান, সবসময় মাকে মনে পড়তো তার। মা ও বোনের কাছে যেতে ইচ্ছা হতো, কিন্তু বাবা রাজি হয়নি।

পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোনের সঙ্গে যোগাযোগ হলে সামিরা কিছু সুদানি ও মালয়ী বন্ধুদের সহায়তায় ভাইয়ের জন্য ভিসা ও বিমান টিকিটের ব্যবস্থা করে তাকে দুবাই নিয়ে আসেন।

এসআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।