কোটালীপাড়ায় খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ


প্রকাশিত: ০৬:২৪ এএম, ২৮ মে ২০১৫

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ডিজাইন অনুযায়ী খাল খনন না করে ঠিকাদারের লোকজন তাদের ইচ্ছামতো খাল খনন করছে।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১ কোটি ৯৩ লাখ ৫২ হাজার ৬ টাকা ব্যয়ে কোটালীপাড়া উপজেলার হিরন ইউনিয়নের হিরন থেকে পোলসাইর হয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দত্তডাঙ্গা পর্যন্ত স্বনির্ভর খালসহ ৬ টি খালের ১৬.৩৭০ কি. মি. খননের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামরুল এন্টার প্রাইজ। হিরন ইউনিয়নের স্বনির্ভর খালের ৬.৯৫০ কি.মি. খননের কাজ শুরু করার পরই খনন নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

পোলসাইর গ্রামের কৃষক কৃষ্ণ মৌলি (৫০), গাউছ শেখ (৪৫) ও রতন দাস (৫৫) অভিযোগ করে বলেন, খাল খনন করে মাটি খালের মধ্যেই ফেলা হয়েছে। এতে খালের প্রস্থ্ কমে গেছে। আমরা বাধা দিলেও ঠিকাদারের লোকজন আমদের ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের ইচ্ছামতো কাজ করছে। এভাবে খাল খনন করলে সেচ মৌসুমে খালে পানি থাকবে না। আমরা সেচ কাজ করতে পারব না।

পোলসাইর গ্রামের গনেশ পাগল সেবাশ্রম ক্লাবের সভাপতি নির্মল রায় বলেন, ডিজাইন অনুসারে খাল খনন করা হচ্ছে না। খাল খননে ফাঁকি দিয়ে পুকুর চুরি করা হচ্ছে। যে উদ্দেশ্যে খাল খনন করা হচ্ছে তা বাস্তবায়িত হবে না। সরকারের টাকা জলে যাবে।

পোলসাইন কৃষক সুজন বিশ্বাস বলেন, খালের তলা থেকে মাটি কেটে খালের মধ্যেই ও খাল পাড়ে ফেলা হয়েছে। বর্ষার সময় এ মাটি ধুয়ে আবার খালে নেমে আসবে এবং খাল খরাট হয়ে যাবে। শুকনো মৌসুমে খালে পানি শুকিয়ে যাবে। ফলে সেচ, যাতায়াত ও পণ্য পরিহন করা সম্ভব হবে না।

হিরন উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক পান্নু খান বলেন, ডিজাইনে ৩০ ফুট প্রস্ত, ১৫ ফুট চালি ও তলায় ৫ ফুট গভীর করে খাল খননের কথা রয়েছে। খননে প্রস্থ্, চালি ও গভীরতার ক্ষেত্রে ব্যাপক ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। এতে ঠিকাদার লাভবান হবেন। কিন্তু কৃষকের কোন লাভ হবে না।

হিরন গ্রামের আরেক কৃষক মো. আতাহার মিয়া (৬৫) বলেন, খালে আমাদের অংশে ১০ টি সেচ ব্লক রয়েছে। এভাবে খাল খনন হলে ওইসব ব্লকে সেচের সময় পানি দেওয়া সম্ভব হবেনা।  আমরা চরমভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

হিরন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুন্সি এবাদুল ইসলাম বলেছেন, এ খালের দু’পাড়ে হাজার হাজার একর জমি রয়েছে। এ খালের পানি সেচ দিয়ে কৃষক ফসল ফলায়। পোলসাইরে খালের প্রস্থ ৩০ ফুটের স্থলে ১৫ ফুটও খনন করা হয়নি। চালি ও গভীরতার ক্ষেত্রে একই কাজ করা হয়েছে। খাল খননে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন তদারকি নেই। এ কারণেই ঠিকাদার ইচ্ছামতো কাজ করছে। স্থানীয়রা বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন ভয় ভীতি দেখায়।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামরুল এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আবু সাঈদ সিকদার বলেন, কাজ কেবল শুরু হয়েছে। এখানো খননসহ ফিনিশিং কাজ বাকী রয়েছে। আমরা ডিজাইন অনুসারেই সমস্ত কাজ সম্পন্ন করব। এখানে কোন প্রকার ফাঁকি দেয়া হবে না।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব ডিভিশনাল প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা তদারকি অব্যাহত রেখেছি। খাল খননে ঠিকাদার কোন প্রকার ফাঁকি দিতে পারবে না।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, আমি কাজের সাইট পরিদর্শন করেছি। ডিজাইন আনুযায়ী খাল খননের জন্য সাব ডিভিশনাল প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি। ডিজাইন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেওয়া হবে।

এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।