যশোরে দুই বন্ধুকে হত্যার পর গণপিটুনির নাটক


প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ২৭ মে ২০১৫

যশোরে দুই বন্ধু ইসমাইল হোসেন ও আল-আমিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার পর গণপিটুনির নাটক সাজিয়েছে পুলিশ। পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। বুধবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের পরিবার এমনটি দাবি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত ইসমাইল হোসেনের মা রেহেনা বিলাল, বাবা শেখ বিলাল উদ্দিন, মামা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিপু, বড় মামা মঞ্জুরুল আলম, নিহত আল আমিনের বড় ভাই রবিউল ইসলাম।

এ সময় নিহত ইসমাইল হোসেনের মা রেহেনা বিলালের আর্তনাদে গোটা সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। ইসমাইল হোসেনের মামা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিপু লিখিত বক্তব্যে ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জোড়া খুনে পুলিশকে অভিযুক্ত করেন।

দেলোয়ার হোসেন দিপু অভিযোগ করে বলেন, গত ২৪ মে রাতে ইসমাইল ও আল-আমিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রশাসনের কতিপয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের বক্তব্যে গরমিল লক্ষ করা গেছে।

পুলিশ প্রশাসন বলছে, নিহতরা মোটরসাইকেল ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তিনটি চাকু ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের তথ্যমতে, নিহত এই দুই যুবককে ডাকাত সন্দেহে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করেছে।

কয়েকটি পত্রিকায় পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুর রশীদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি বায়েজীদ ও কানন নামে দুই সন্ত্রাসীও ডাকাতিকালে উপস্থিত ছিল। তারা পালিয়ে গেলেও আল-আমিন ও ইসমাইল জনতার গণধোলাইয়ের শিকার হয়। এ সময় মঞ্জুর রশীদ হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র নিহত ব্যক্তিদের কাছে পাওয়া যায়।

পুলিশের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে নিহত ইসমাইল হোসেনের মামা দেলোয়ার হোসেন বলেন, কথিত ছিনতাইয়ের শিকার বরুণ তরফদার এবং তার তৈরি ডাকাতি ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত গল্পের মতোই। কারণ ছিনতাই এবং গণপিটুনির কথা স্থানীয়রা কেউই জানেন না। গণপিটুনির কথা বলা হলেও নিহতদের মাথা ও মুখমন্ডল ছাড়া শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। নিহতদের মাথা ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। তাদের মাথার খুলির সামনের অংশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।

দিপু উল্লেখ করেন, যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পড়ুয়া এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে ইসমাইল অথবা আল-আমিনের কোনো একজনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পেরেছি। ওই মেয়েটির সঙ্গে বরুণ তরফদারের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আর এ সম্পর্ক নিয়ে বিরোধের কারণে পুলিশের সাহায্যে নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এখন আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন গল্প তৈরি করে পরিবেশন করা হয়েছে। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বরুণ তরফদার ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাছ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উন্মোচিত হবে।

তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিকদার আক্কাছ আলী বলেন, তাদের অভিযোগ সত্য নয়। আমরা খবর পেয়ে গণপিটুনিতে মারাত্মক আহত দুইজনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। অস্ত্র উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা এবং ছিনতাইয়ের কবলে পড়া বরুণ তরফদার বাদী হয়ে আরো একটি মামলা করেছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে রাতে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের হুদোর মোড় এলাকায় আল-আমিন (২৪) এবং যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইসমাইল হোসেনকে (২১) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশের দাবি, ডাকাতি করতে গিয়ে তারা গণপিটুনিতে মারা গেছে।

মিলন রহমান/এআরএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।