বিচারকের আসনে বসছেন তৃতীয় লিঙ্গের জয়িতা


প্রকাশিত: ০৬:২৮ এএম, ০৯ জুলাই ২০১৭

ভারতে বিচারক হিসেবে এবার দেখা যাবে তৃতীয় লিঙ্গের জয়িতা মণ্ডলকে। চার বছর আগেও থাকার জায়গা ছিল না। বিহার ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ইসলামপুরের হোটেল থেকে ঘাড়ধাক্কা খেয়ে বাসস্ট্যান্ডেই রাত কাটিয়েছিলেন জয়িতা। কিন্তু সেসব অপমানের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ এসেছে এবার।

কিছুদিন আগেই আশ্রয়হীন থাকা তৃতীয় লিঙ্গের জয়িতাকে মহকুমা লোক আদালতে বিচারকের ভূমিকায় দেখা যাবে। শনিবারই ইসলামপুর লোক আদালতে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন জয়িতা। ইসলামপুরেই সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সুবাদে স্থানীয় প্রশাসনের থেকে এই স্বীকৃতি ছিনিয়ে এনেছেন তিনি।

২৯ বছরের জয়িতা কয়েক বছর আগে কলকাতায় নেতাজি নগরের একটি কলেজে বিএ পড়ার সময়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন তার নাম ছিল জয়ন্ত। পরে নিজের নাম দেন জয়িতা। শিলিগুড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে এইচআইভি সচেতনতার কাজ করতে করতেই তার প্রথমবার ইসলামপুরে যাওয়া। প্রান্তিক এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য কাজের ইচ্ছাটা তখনই আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কাজ করা বা সামাজিক মর্যাদার অধিকার স্বীকৃতি পাওয়ায় জয়িতাদের লড়াই কিছুটা মসৃণ হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ড গড়ে তুলেছে। ওই বোর্ডের সদস্য রাজ্য সমাজকল্যাণ সচিব রোশনী সেন বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলায় জেলায় ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য কমিটিও গড়া হচ্ছে।’

তার মতে, জেলায় জেলায় সমাজের বিশিষ্ট ভূমিকায় ট্রান্সজেন্ডাররা উঠে এলে তা সামাজিক বিদ্বেষ বা ভুল ধারণা ভাঙতেও সাহায্য করবে। ইসলামপুরে জয়িতার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।

সাধারণত, বিভিন্ন জেলা আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া কিছু মামলা ও লঘু অপরাধের নিষ্পত্তি হয় লোক আদালতে। প্রাক্তন বিচারক, আইনজীবী ও সমাজে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিচারক হন।

জয়িতা প্রসঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের জেলা শাসক আয়েষা রানি বলে, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে নয় বরং একজন গুরুত্বপূর্ণ সমাজকর্মী হিসেবেই জয়িতা প্রশাসনের সম্পদ।’

ইসলামপুরে ১৯৭ জন ট্রান্সজেন্ডারকে নিয়ে কাজ করছেন জয়িতা। তার চেষ্টাতেই সেখানে কেন্দ্রীয় রোগী কল্যাণ সমিতি প্রকল্প বা সরকারি বৃদ্ধাবাস সামলাচ্ছেন রূপান্তরকামীরা।

প্রশাসনের সাহায্যে হাতের কাজ, বিউটিশিয়ান, সেলাইয়ের কাজও শেখানো হচ্ছে অনেককে। জয়িতার জানান, ‘এতদিন আইনি লড়াই লড়তে কোর্টে গিয়েছি। কিন্তু এখন নিজেই বিচারক হিসেবে কাজ করব।’

টিটিএন/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।