যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষার সক্ষমতা নেই মার্কিন সেনাবাহিনীর?


প্রকাশিত: ০৭:০৩ এএম, ০৬ জুলাই ২০১৭

উত্তর কোরিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষার জেরে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে মার্কিন সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। সুরক্ষা ইস্যুতে পেন্টাগনের ওপর সব মার্কিনি দৃঢ়তার সঙ্গে ভরসা রাখতে পারছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা প্রদেশে আঘাত হানার উপযোগী পিয়ংইয়ংয়ের প্রথম আইসিবিএম পরীক্ষার পর প্রশ্ন উঠেছে : ধেঁয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত অথবা প্রতিরোধ করতে মার্কিন সেনাবাহিনী কতটা সক্ষম?

বুধবার পেন্টাগন নৌ-বাহিনীর ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সীমিত হুমকির বিরুদ্ধে রক্ষা করার সামর্থ্যের ওপর আমাদের আস্থা আছে, সাম্প্রতিক হুমকির বিরুদ্ধেও আছে।

মার্কিন নৌবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, গত মে মাসে মিসাইল ইন্টারসেপ্টর (ক্ষেপণাস্ত্র আটককারী) অস্ত্রের সফল পরীক্ষার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রমুখী উত্তর কোরিয়ার কৃত্রিম আইসিবিএম ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে সেই পরীক্ষা কর্মসূচি নিখুঁত ছিল না বলে স্বীকার করেন তিনি।

ডেভিস বলেন, এটা নিয়ে আমাদের মিশ্র ফল আছে। তবে মিসাইল ইন্টারসেপ্টরের চেয়ে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করার সক্ষমতা আছে আমাদের।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি মেমো হাতে পেয়েছে। সেখানে মে মাসের ওই পরীক্ষার পর মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো উন্নত করার কথা বলা হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, বহুস্তরের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার পেছনে শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরও উত্তর কোরিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি অথবা সম্ভবত অল্প কিছু আসন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম। উত্তর কোরিয়া প্রযুক্তি ও উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। হুমকির সঙ্গে তাল রেখে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যদি জোরদার না করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুড়িয়ে যেতে পারে।

মিসাইল ডিফেন্স অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স’র প্রতিষ্ঠাতা রিকি এলিসন রয়টার্সকে বলেন, আগামী চার বছরে মোতায়েন ব্যবস্থার সক্ষমতা অধিক দ্রুত ও আক্রমণাত্মক গতিতে বৃদ্ধি করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।

মিশ্র ফল

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংস্থার (এমডিএ) রেকর্ডে দেশটির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ, পরীক্ষায় মিশ্র ফলাফল দেখা গেছে। এমডিএ ব্যবস্থার কয়েকটি স্তর রয়েছে। সমুদ্রসীমা ও স্থলে সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এসব কিছুই করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল ও ভূখণ্ডের সুরক্ষার জন্য।

এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্থলভিত্তিক মিডকোর্স ডিফেন্স সিস্টেম (জিএমডি)। এর সফলতার হার মাত্র ৫৫ শতাংশের ওপরে। দ্বিতীয় আরেকটি ব্যবস্থা হচ্ছে অ্যায়েজিস সিস্টেম; যা বিদেশে মার্কিন নৌ-বাহিনীর জাহাজ ও স্থলে মোতায়েন করা হয়। এমডিএ বলছে, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী এই ব্যবস্থার সফলতার হার প্রায় ৮৩ শতাংশ।

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী তৃতীয় ব্যবস্থা হচ্ছে টার্মিনাল হাই আলটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড)। ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ বার পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী এই থাডের সফলতার হার শতভাগ বলে জানিয়েছে এমডিএ।

থাড এবং অ্যায়েজিসের প্রধান চুক্তিকারী কোম্পানি হচ্ছে লকহিড মার্টিন করপোরেশন। এছাড়া জিএমডির প্রধান চুক্তিকারী কোম্পানি হচ্ছে বোয়িং কো।

১৯৮০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের প্রশাসনের সময় থেকে দেশটির সরকার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও স্যাটেলাইটে সনাক্তকরণসহ সমুদ্রভিত্তিক অ্যায়েজিস ব্যবস্থার উন্নয়নে এখন পর্যন্ত অন্তত ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। মার্কিন কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় এমডিএ’কে গড়ে ৮.১২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৮ অর্থ-বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমডিএ’র জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন ৭.৮ বিলিয়ন ডলার।

এসআইএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন