অবশেষে আসছে চলচ্চিত্র নীতিমালা
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গেল বছর জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ছিলো অপেক্ষা। অবশেষে ক্ষণ গোণার অবসান ঘটলো।
ঘোষণা অনুযায়ী চলচ্চিত্র নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সোমবার এফডিসিতে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্তকরণের উদ্দ্যেশ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, অনুপম হায়াত, চিন্ময় মুৎসুদ্দি, ড. সাজেদুল আউয়াল, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, কামার আহমেদ সাইমন, সামিয়া জামান, মোহাম্মদ হোসেন জেমি, মুশফিকুর রহমান গুলজার, মোরশেদুল ইসলাম, গোলাম সরয়ার, মানজারে হাসিন মুরাদ, ড. সাজেদুল আউয়াল, এফডিসির সাবেক এমডি হারুন-অর-রশিদসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের ব্যক্তিরা।
সভায় বক্তাদের সামনে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৪ এর খসড়া’ উপস্থাপন করা হয়। তাদের এর উপর বিভিন্ন মতামত দেবার সুযোগ দেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘সভায় উপস্থিত সবাই বক্তব্য না দিতে পারায় সবার কাছ থেকে লিখিত আকারে মতামত চাওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই সবার লিখিত বক্তব্য নিয়ে একটি সভা হবে। এর আগে এ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সবার বক্তব্য অনুযায়ী চূড়ান্ত খসড়া ওয়েব সাইটে উন্মুক্ত করা হবে সর্বসাধারণের মতামতের জন্য। তারপর মন্ত্রীসভায় নীতিমালাটি অনুমোদন করা হবে।’
এদিকে সাংবাদিকদেনর হাতে খসড়া নীতিমালার একটি করে কপি দেয়া হয়েছে। নীতিমালার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য-
বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিতরণ ও প্রদর্শনের দ্বার উন্মুক্তকরণ।
রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিতরণ ও প্রদর্শন নিশ্চিতকরণ।
সরকারী ও বেসরকারী অংশগ্রহণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিতরণ, প্রদর্শন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রমকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা।
বাংলাদেশের নিজস্ব চলচ্চিত্রের ধারা বিনির্মাণে সরকারী ও বেসরকারী খাতের ভূমিকা নির্ধারণ।
চলচ্চিত্র শিল্পে উন্মুক্ত ও সুষম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা।
ঔপনিবেশিক আমলের চলচ্চিত্র সেন্সর আইন বিলুপ্ত করে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা চালুর কর্ম পরিকল্পনা তৈরি।
চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিতরণ, প্রদর্শন ও অন্যান্য কার্যাবলী যাতে শিল্পের সকল সুবিধা লাভ করতে পারে সেজন্য একটি ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ।
চলচ্চিত্র রপ্তানি ও আমদানী-
বিদেশ থেকে চলচ্চিত্র আমদানীর ক্ষেত্রে বিশেষ চুক্তি এবং সমঝোতা ব্যতীত কোন বিশেষ দেশ এবং ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা যাবে না। একইভাবে কোন বিশেষ দেশ এবং প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দ্দিষ্ট কারণ ছাড়া বাংলাদেশে চলচ্চিত্র রপ্তানী থেকে বিরত করা যাবে না।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিদেশে রপ্তানীর ক্ষেত্রে সরকারের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে। এ অনাপত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে রপ্তানীর জন্য প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রের বিষয়, কারিগরি ও নান্দনিক মান বিচার করে সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্র বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে পারবে কি না এবং বিদেশে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বাজার সৃষ্টি/সম্প্রসারণে সহায়ক হবে কি না-এসব বিবেচনা করতে হবে।
বিদেশ থেকে চলচ্চিত্র আমদানী এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিদেশে রপ্তানীর অনাপত্তি প্রদানের সুপারিশ প্রদানের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তথ্য মন্ত্রণালয় বা সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোনো মন্ত্রাণালয় বা প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
আধুনিক প্রদর্শন ব্যবস্থা ও চলচ্চিত্রে পেশাদারিত্ব-
বাণিজ্যিকভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের উপযোগী প্রেক্ষাগৃহের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে একটি প্রেক্ষাগৃহ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
অনলাইনে চলচ্চিত্র মুক্তির কারিগরি সুবিধা সৃজন করা হবে।
অনলাইন চলচ্চিত্র মুক্তির জন্য অংশীজনদের মতামত নিয়ে বিএফডিসিতে বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে সেন্ট্রাল সার্ভার স্থাপন করা হবে।
চলচ্চিত্রের ইলেক্ট্রনিক ভার্সনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
চলচ্চিত্রে পেশাদারিত্ব সৃষ্টির প্রয়াস-
প্রতিটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পূর্বে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন সেলে নিবন্ধন করতে হবে। বিএফডিসির সাচিবিক সহায়তায় এ নিবন্ধন সেল গঠন করা হবে।
চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রদর্শন ও বিতরণের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়-
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে চলচ্চিত্রে এমন কোন তথ্য, কাহিনি, দৃশ্য ও বক্তব্য পরিবেশন ও প্রদর্শন করা যাবে না।
এলএ