কুমারিত্ব ঠিক রাখতে জনপ্রিয় হচ্ছে অস্ত্রোপচার
কুমারীত্ব নিশ্চিত করতে তিউনিসিয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কসমেটিক সার্জারি। মুখমণ্ডল, নাক, স্তনে পরিবর্তন আনতে এ ধরনের সার্জারির জনপ্রিয়তা রয়েছে অনেক দেশেই। তবে এর বাইরে আরও একটি দিক উঠে আসছে এখন আর সেটি হলো- সতীত্ব পুনর্গঠন; আর সেটির প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে তিউনিসিয়ায়।
অর্থাৎ সামান্য সার্জারির মাধ্যমে যৌনাঙ্গ এমন অবস্থায় আনা যাতে করে মনে হয় তার আগে কোন যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি। এর কারণ হলো তিউনিসিয়ায় বিয়ের পর অনেক পুরুষ সন্দেহ করেন যে তার নবপরিণীতা স্ত্রী আগেই সতীত্ব হারিয়েছেন।
এই সার্জারিগুলো হচ্ছে রাজধানী তিউনিসের ক্লিনিকগুলোতে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে। বিবিসির সংবাদদাতা কথা বলেন এমন একজন তরুণীর সঙ্গে, যার নাম ইয়াসমিন (ছদ্মনাম)। ক্লিনিকে অপেক্ষমান কক্ষে বসে তিনি বলেন বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেই চিন্তিত যে এটা কতটা গোপন থাকবে।
‘এটা অনেকটা আত্মপ্রবঞ্চনার মতো এবং আমি আসলেই উদ্বিগ্ন যেকোনো দিন হয়তো আমার স্বামীর সঙ্গে আলাপচারিতার সময় ভুলবশত নিজের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলতে পারি। বা আমার স্বামী হয়তো সন্দেহ করার জন্য কিছু ক্লু পেয়ে যাবেন।’
২৮ বছর বয়সী ইয়াসমিন জন্মগ্রহণ করেছেন একটি উদার পরিবারে এবং বহু বছর এ পরিবারটি বসবাস করেছে তিউনিসিয়ার বাইরে। তার ভয় তার হবু বর যদি তার যৌন অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারেন তাহলে হয়তো বিয়েই ভেঙ্গে দেবেন।
‘একজনের সঙ্গে আমার প্রেম ছিলো এবং তখন আমি বুঝতেই পারিনি সমাজে এটা নিয়ে কেমন চাপ কাজ করে আর এর পরিণতিই বা কেমন হতে পারে। আর সে কারণেই এখন আমার ভয় লাগছে। আমি যদি এগুলো আমার হবু বরকে বলি তাহলে আমি নিশ্চিত সে বিয়ে বাতিল করে দেবে।’
যৌনাঙ্গ পুনর্গঠনের একটি বিশেষ পদ্ধতির সার্জারির জন্য চিকিৎসককে দিতে হবে প্রায় চারশ ডলার, এর মাধ্যমে তার সতীত্ব ফিরে পাওয়ার কথা। অর্থাৎ সতী বা ভার্জিন মনে হবে তাকে। পরিবার ও প্রেমিক যার সঙ্গে তার বিয়ে হবে তাকে না জানিয়েই টাকা জমিয়ে এ ধরনের সার্জারিতে যাচ্ছেন এই তরুণী। যদিও এ অপারেশনটি যিনি করবেন সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একজন পুরুষ।
প্রতি সপ্তাহেই এ ধরনের গড়ে দুটি করে অপারেশন তাকে করতে হয়। তিনি বলছিলেন, ‘স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের সতীত্ব পুনর্গঠনের অপারেশনটি করে থাকেন। এটা খুব ব্যতিক্রম কিছু নয়। যদিও অনেক চিকিৎসক এটা করতে চান না। আমি করি কারণ আমি তাদের সঙ্গে একমত নই।’
‘এটা ধর্মীয় নীতিমালায় পরিপূর্ণ একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। যেহেতু সবকিছু পুরুষ নিয়ন্ত্রিত তাই সবদিক থেকেই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে’ -বলছিলেন বিশেষজ্ঞ পুরুষ চিকিৎসক। নারী অধিকার সুরক্ষার জন্য উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে তিউনিসিয়া খুবই প্রশংসিত একটি দেশ। এ সত্ত্বেও দেশটিতে ধর্ম ও প্রথাই অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রক।
এমনকি সেটি নারীর সতীত্বের ক্ষেত্রেও। সমাজের নিয়মটাই এমন দাঁড়িয়েছে যে বিয়ের আগে নারীকে যে কোনো মূল্যে সতীত্ব রক্ষা করতে হবে। সমাজবিজ্ঞানী সামিয়া ইলৌমির মতে তিউনিসিয়ার সমাজ প্রতারণায় পরিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘তিউনিসিয়ার সমাজ একটি মুক্ত সমাজ কিন্তু আমরা আসলে প্রতারক হয়ে যাচ্ছি। এখানে যেমন কিছু সামাজিক রীতি নীতি আছে যেগুলো পালনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ আমরাই আবার দাবি করি যে এটি একটি আধুনিক সমাজ। আমরা ততটুকু আধুনিক হইনি যা প্রতিফলন নারী যৌনতা ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দেখা যায়।’
দেশটির এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিশেম। আগামী বছরেই বিয়ে করবেন তিনি। বিবিসির সংবাদদাতা তার কাছে জানতে চান যে তার হবু স্ত্রীর সতীত্ব আছে কি- নেই তার কোনো মূল্য তার কাছে আছে কিনা।
‘আমার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পর আমি যদি বুঝতে পারি যে সে ভার্জিন নয় তাহলে আমি কখনোই তাকে বিশ্বাস করতে পারবো না। আমি এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেই বিবেচনা করবো। আর আমি কিন্তু সতীত্ব পুনর্গঠনেও বিশ্বাস করিনা। আমার মনে হয় না এটা কার্যকর কিছু।’
আর এমন সব দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই ক্লিনিকগুলোকে নারীদের আসা যাওয়া চলছে অনেক নীরবেই যাতে করে কারও দৃষ্টিতে না পড়তে হয়। বিবিসি বাংলা।
এসআইএস/এমএস