কুড়িগ্রামে ঘাস চাষে ভাগ্য পরিবর্তন


প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ১৭ মে ২০১৫

কুঁড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চর কাপনা ও চর সাতভিটা গ্রামের আড়াই শতাধিক পরিবার উন্নত জাতের সুইট জাম্বো ঘাস চাষ এবং গরু মোটাতাজাকরণের কাজ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। এই কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অংশগ্রহণ করায় সংসারে স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন তারা শক্ত ভীতের উপর দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছে ।

চর কাপনা গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত যুবক মোবারক হোসেন (৪৮) জানালেন, দাতা সংস্থার মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের বিনামূল্যে গরু ও ঘাস সরবরাহ করায় এলাকার জীবনযাত্রা পাল্টে যাচ্ছে। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের কারণে অন্যান্যদের ইচ্ছে থাকলেও তারা এই কাজে এগিয়ে আসতে পারছে না।

একই গ্রামের সুবিধাভোগী আম্বিয়া খাতুন (৪৫) জানালেন, ‘হামার চরত আড়াইশ জন বেটিছইল (মহিলা) মিলিমিশি কাম করবেইছে। ইয়ার মধ্যে ১শ ২০জন গরু পাইছে আর ১শ ৩০জন ঘাস পাইছে। মুই তিন বছর আগোত বিনা টাকায় গরু পাইছুনু। সেই গরু ৪০ হাজার টেকায় বেছায়া আরো ২ টা গরু কিনছু। এলা বাজারোত নিয়া গেইলে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টেকাত বেচপার পামো।

চর সাতভিটা গ্রামের আলেয়া বেগম জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বললেন, ‘বাহে আগোত হামরা স্বামীর কাম করছি, তাতে দিন গেইছে, এ্যালা হামরা নিজেরা কাম করি টেকা জমাবার পারছি।

জানা গেল, বাংলাদেশ সরকারের সাথে যৌথভাবে বৃটিশ ও অষ্ট্রেলিয়ান সরকারের উন্নয়ন সংস্থাসমূহ প্রত্যন্ত চরগুলোতে চর জীবিকায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে চর কাপনা ও চর সাতভিটা গ্রামের আড়াইশ নারীকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি করে উন্নতজাতের গরু এবং ঘাস বীজ সরবরাহ করা হয়।

উপকারভোগী আর্জিনা (৪২) জানায়, ‘মুই ৯ হাজার টেকা খরচ করি এক একর জমিত জাম্বো ঘাস নাগাইছং। পেথমবার ঘাসকাটি বেচি ১৮ হাজার টেকা পাইছং। এই ঘাস আরো দুইবার কাটি বেছপার পাইমো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই গ্রামে প্রায় ২০ একর জমিতে এই ঘাস বপণ করা হয়েছে। চরের ৮ শতাধিকেরও বেশি পরিবারের মধ্যে আড়াই শতাধিক পরিবারকে সম্পৃক্ত করা গেলেও অন্যদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সংকটের কারণে তারা এই কাজে এগুতে পাচ্ছে না।

এই চরের ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করতে এসে রংপুর বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সহিদুল ইসলাম নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে জানালেন, প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে কোনো প্রকার প্রণোদনার সুযোগ নেই। এখন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ঋণ সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে। এজন্য যোগাযোগ করতে হবে। একই কথা জানালেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. অমিতাভ চক্রবর্তী।

আইডিই (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রইজেস) এর বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আইএমএফপি (ইন্টিগ্রেটেড মিট এ্যান্ড ফডার মার্কেট ডেভেলপমেন্ট) প্রজেক্টের ফিল্ড টিম লিডার কৃষিবিদ হাশেম আলী আকাশ ও বিজনেজ ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ আব্দুস সালাম জানান, প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য দূরীকরণে গরু মোটাতাজাকরণ এবং ঘাস উৎপাদন একটি ভাল উদ্যোগ। আইডিই সিএলপি’র মাধ্যমে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় হতদরিদ্রদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রাণী সম্পদের উপর কাজ করছে।

এই প্রোগ্রামে ৬ জেলায় ১০টি উপজেলাতে ২হাজার ৬শ ৫২জন সফলভোগী রয়েছে। নতুন প্রযুক্তি আর প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধি করা। এজন্য বিভিন্ন কোম্পানি, প্রাণী সম্পদ অধিদফতরকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। চর ব্যবসা কেন্দ্র বা সিবিসি নামে একটি সংগঠন খোলা হয়েছে যেন প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে চরাঞ্চলের মানুষজন তাদের ভাগ্য উন্নয়নের এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। এজন্য কুড়িগ্রাম জেলায় ৩টি এনজিও’র মাধ্যমে ১৫ হাজার প্রান্তিক পরিবারকে সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।

এসএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।