২১ তলা থেকে ৬ সন্তান নিয়ে নিচে নেমে মা পেলেন চার জনকে


প্রকাশিত: ০৫:২১ এএম, ১৫ জুন ২০১৭

লন্ডনের ২৪ তলা বিশিষ্ট গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সত্তর জনের বেশি মানুষকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।

বহুতল ওই ভবন থেকে যারা বেঁচে ফিরেছেন তাদের মুখে একটাই কথা ছিল, ‘দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে এলাম।’ লেলিহান শিখা থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন দমকল কর্মীরা। দমকল বাহিনীর কমিশনার ড্যানি কটন বলছেন, ‘২৯ বছরের অভিজ্ঞতায় এমন অগ্নিকাণ্ড দেখিনি।’

ওই ভবনের ১১ তলায় মৌনা এলোগবানি বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে নিজেও ঘুমুতে যাচ্ছিলেন। রাত দেড়টা তার এক বন্ধু ফোন করে জানালেন তাদের আবাসনে আগুন লেগেছে। শুনেই বাচ্চাদের নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে দেখেন সত্যিই আগুন লেগেছে। পরে কোনো মতে সেখান থেকে বের হয়েছেন তিনি।

২১ তলা থেকে নিজের ছয় সন্তানকে নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন আর এক মা। কোনো মতে তাড়াহুড়া করে নিচে নেমে এসে দেখেন তার ছয় সন্তানের মধ্যে চারজন আছে আর বাকি দুই সন্তানকে খুঁজে পাননি তিনি। মাত্র পনেরো মিনিটেই আগুন এত আগ্রাসী হয়ে উঠবে বুঝে উঠতে পারেননি কেউ। দমকল বাহিনী আসার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। আগুনের আতঙ্কে হুড়োহুড়ির মধ্যে কে কোথায় ছিটকে গিয়েছেন জানেন না। যারা কোনওমতে বেঁচে গিয়েছেন তাদেরও নিখোঁজ স্বজনদের কথা ভেবে উদ্বেগ কাটছে না।

তেমনই এক জন হানান ওয়াহাবি। নয়তলায় থাকতেন ৩৯ বছরের ওই নারী। রাত একটার দিকে ধোঁয়ার গন্ধে ঘুম ভেঙে যায় তার। বসার ঘরের জানলা দিয়ে ধোঁয়া ঢুকছে দেখে উঠে গিয়ে বাইরে তাকাতেই বুঝতে পারেন মারাত্মক অবস্থা। জানলার পাশেই আগুনের আঁচ টের পান। জানলা বন্ধ করে হানান লোকজনকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে যান।

বের হওয়ার পড়েই তার মনে পড়ে ২১ তলায় ভাই রয়েছে। তখনও আগুন অত উপরে ওঠেনি। ভাইকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে হানান বেরিয়ে আসতে বলেন। তার ভাই তাকে জানান, ‘মেঝেতে তোয়ালে পেতে এক ঘরে সবাইকে বসতে বলেছে দমকল বাহিনী। তাই বের হতে পারছেন না। চারদিকে খুব ধোঁয়া।

রাত দুইটার পর থেকে আর ফোনে পাননি ভাইকে। এদিকে, ১৬ তলার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ আগুনে হারিয়েছেন সব মূল্যবান কাগজ। তিনি বলেন, ‘আর কিছুই নেই। সৌদি আরবে হজে যাব কী করে? পাসপোর্টটাই হারিয়ে গেল।’

উত্তর কেনসিংটনের গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর দমকল কর্মীরা ৬৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভবনটিতে এখনো অনেকে আটকে আছেন। বাঁচার জন্য কেউ কেউ জানালা দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়েছেন।

আগুন লাগার আগে নর্থ কেনসিংটনের ঐ ভবনটিতে সংস্কার কাজ চলছিল। সে সময় ভবনের বাসিন্দাদের অনেকেই গুরুতর অগ্নিকান্ডের ঝুঁকির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সাবধান করেছিলেন।

তবে কি কারণে ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।

টিটিএন/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।