কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাসের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে আগামী ১৮ মে থেকে তিন মাসের জন্য সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে। গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগিরই গেজেটে আদেশটি জারি করবে জেলা প্রশাসন। ওইদিন মধ্যরাত থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মাইনুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোস্তফা জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৮ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। তবে আদেশটি জারি হবে তিন মাসের জন্য।
সভায় বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিশাল কাপ্তাই হ্রদে চলতি মৌসুমে মাছের সুষ্ঠু ও প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি, মজুদ এবং ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহন ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। আদেশটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ মৎস্য কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন জানান, দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিতসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত হ্রদ হতে সব ধরনের মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলাকালে হ্রদের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করবেন।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মাইনুল ইসলাম বলেন, মাছের প্রজনন মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ থেকে মাছ আহরণ, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন বন্ধ রাখতে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী ১৮ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কাপ্তাই লেকের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ ও পরিবহন সবই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আগে দেখা গেছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি কিঞ্চিৎ লাভের আশায় প্রতিবছর মাছের এই প্রজনন মৌসুমে অবৈধভাবে কাপ্তাই হ্রদের মা ও পোনা মাছ আহরণ, বাজারজাতকরণ ও পাচার করে থাকেন। যা মাছের প্রজনন ও উৎপাদনের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
জেলা প্রশাসক বলেন, চলতি মৌসুমে ১৮ মে মধ্যরাত থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মৎস্য আহরণ, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধসহ ওই সময়ে হ্রদে কারেন্ট জাল, কাথা জাল, বেড়া জাল, মশারি জাল এবং ফাঁস জালসহ কোনো কিছু দিয়ে মাছ ধরা যাবে না।
হ্রদে মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে রাঙ্গামাটি ফিশারিঘাট, জেলা পরিষদঘাট, লংগদু, বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই, ডিসি বাংলোঘাটসহ সুবিধাজনক জায়গায় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। হ্রদ এলাকার ছয়টি মৎস্য অভয়াশ্রমে সব মৌসুমে মাছ শিকার ও আহরণ বন্ধ থাকবে। হ্রদে মাছ শিকার বন্ধকালে জেলে পরিবারদের সহায়তায় ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে চাল বিতরণ করা হবে।
সুশীল চাকমা/এমজেড/আরআই