বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনা : ফেঁসে যাচ্ছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা
বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত একজন অপরাধীকেও ধরতে পারেনি পুলিশ। এমনকি ঘটনার ২৩ দিনেও কাউকে শনাক্ত হয়নি। তবে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দুই অপরাধীকে ছেড়ে দেয়ায় ফেঁসে যাচ্ছেন পুলিশের এক পরিদর্শক ও উপ-পরিদর্শক।
গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ ও প্রমাণাদির ভিত্তিতে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাদেরকে বহিষ্কার কিংবা সাময়িক বহিষ্কারের কথা ভাবছে পুলিশ।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জাগো নিউজকে বলেন, বর্ষবরণ উৎসবে টিএসসি এলাকায় যৌন হয়রানির ঘটনায় শাহবাগ থানার দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পুলিশ যে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছিল, তাতেও কারো সাড়া মেলেনি। তবে পুলিশ বলছে, লাঞ্ছনার শিকার কোনো নারীও পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এ পর্যায়ে অপরাধীদের ধরতে আর কোনো উদ্যোগই নিচ্ছেন না তারা। পুরো তদন্ত থমকে আছে।
বাংলা নববর্ষের দিনে দুপুরের পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানুষের ঢল নামে। মানুষের ভিড় সামাল দিতে সেখানে পুলিশের কোনো তৎপরতা ছিল না। এই সুযোগে এক শ্রেণির যুবকদের হাতে অনেক নারী লাঞ্ছনার শিকার হন। এসব দৃশ্য পুলিশের স্থাপন করা সিসি ক্যামেরায়ও ধরা পড়ে। কিন্তু পুলিশ গণমাধ্যমে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েই দায় শেষ করেছে। তারা কাউকেই ধরতে পারেনি।
ঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, বর্ষবরণের কোনো কিছুই পুলিশের নজরদারির বাইরে ছিল না। ১৩১টি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পরবর্তীতে ওই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ ইব্রাহিম ফাতেমীকে সভাপতি করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) ওয়াই এম বেলালুর রহমান ও ডিবির উপ-কমিশনার (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।
প্রথম দফায় কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি সেই সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। নতুন করে আরও সাত দিন সময় নিয়েছেন তারা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো ছবি অথবা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তির পরিচয় বা কোনো ধরনের তথ্য থাকলে কমিটির সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বরকে ০১৭১১-৬০৫১৪৬ মোবাইল নম্বরে জানাতে অনুরোধ করাও হয়েছিল। তথ্যদাতার নাম-পরিচয় গোপন রাখার কথাও বলা হয়।
পুলিশ ঘটনা তদন্তে বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। এরপর ঘটনা তদন্তে গোয়েন্দারা নামলেও ঘটনাটির কোনো সুরাহা হয়নি।
বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে কথা হয় কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বরের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাংলা বর্ষবরণের দিন নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। কোনো ভিকটিম পুলিশের কাছে এসে নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনার কোনো অভিযোগ করছেন না। উল্টো পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।
তিনি বলেন, কেউ তো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেনই না বরং আরো প্রচারিত নম্বরটিতে ভিওআইপি নম্বর থেকে কল দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য না দিয়ে ভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে কল দিচ্ছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে নারীরা কীভাবে তাদের জীবনে বিভিন্ন সময়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তাও জানানো হচ্ছে। পুলিশ তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিচ্ছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।
তিনি জানান, ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে সেদিন স্থানীয় কয়েকজন যুবক যৌন নিপীড়নে জড়িত থাকায় পুলিশের হাতে দুই ‘নিপীড়ক’কে ধরিয়ে দিয়েছিল। তবে পুলিশের ‘সেই দুই’ সদস্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা না করেই তাদের ছেড়ে দেয়।
যদি তারা সেই সময় ‘ওদের’ না ছেড়ে দিতেন তাহলে ‘অপরাধীদের’ খুব সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হতো বলেও জানান উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনার দিন দুই অপরাধীকে ধরে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় শাহবাগ থানার তৎকালীন পরিদর্শক সাঈদুল হক ভূঁইয়া ও এসআই আশরাফুল ইসলামের নাম উঠে আসে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পরিদর্শক সাঈদুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমি পরশু দিন তুরাগ থানায় বদলি হয়েছি। পহেলা বৈশাখে কয়েকজন স্থানীয় যুবক যেই দুইজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল তাদের শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আশরাফ ছেড়ে দিয়েছিল।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এসআই আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করেননি।
জেইউ/বিএ/আরআই