রিয়াজ রহমানের ওপর হামলা : তদন্তে নেই অগ্রগতি


প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ০৭ মে ২০১৫

কাগুজে অবস্থায় পড়ে আছে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা। নিজেরা মামলা দায়ের করলেও গত সাড়ে তিন মাসেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি আনতে পারেনি পুলিশ।

র‍্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ আলাদাভাবে মামলার তদন্ত করলেও কারা, কেন এ হামলা চালিয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পায়নি। বিশেষ কোনো ক্লুও উদঘাটন করতে পারেনি তারা।

ঘটনার পর এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানান, রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার তদন্ত হবে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরেও তদন্তে আসেনি অগ্রগতি।

তবে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, রিয়াজ রহমান ও তার স্বজনরা অসহযোগিতা করছেন। কোনো ধরনের তথ্য দিচ্ছেন না তারা।

কয়েক দফায় সাক্ষাতের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে গোয়েন্দারা কথা বলতে পারেননি। গাড়ি চালকের বিষয়েও কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি গোয়েন্দাদের। আর কারণেই তদন্তে অগ্রগতি আসছে না।

গত ১৩ জানুয়ারি গুলশান দুই নম্বরে হোটেল ওয়েস্টিনের কাছে সাবেক এ পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় তিন সপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

হামলার পরে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না করায় পর দিন সন্ধ্যায় গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউল আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৮/১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা (নম্বর-২২) দায়ের করেন।

মামলায় রিয়াজ রহমানের ওপর পরিকল্পিতভাবে গুরুতর আঘাত করা, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, সম্পদ বিনষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে গুলির ঘটনায় সাধারণত হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হলেও এ মামলায় সেই ধারাটি দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মাহফুজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মামলার তদন্তে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতি নেই, দুর্বৃত্তরাও শনাক্ত হয়নি।

তার দাবি, গোয়েন্দা সদস্যরা একাধিকবার রিয়াজ রহমানের বাসায় কথা বলতে গেছেন। কিন্তু বাসায় ঢুকতেই দেয়া হয়নি। রিয়াজ রহমান নিজেও তাদের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী নন বলে গোয়েন্দা সদস্যদের জানিয়েছেন তার পরিবার।

দায়ের করা মামলার এ তদারক কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিয়াজ রহমান নিজে ও তার গাড়ি চালক।

“তদন্তের ক্ষেত্রে এতোটাই অসহযোগিতা করা হচ্ছে যে, নিজের গাড়ি চালকের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি নন মিস্টার রিয়াজ”, জানান এডিসি মাহফুজুল। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকার সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে তা থেকে হামলাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফুটেজগুলো খুবই অস্পষ্ট’।

“মামলার তদন্তে পুলিশি কোনো গাফিলতি নেই। রিয়াজ রহমান ও তার পরিবার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করলে মামলার তদন্ত কাজ এতোদিনে শেষ হয়ে যেতো” দাবি করেন এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

গুলশান জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) ওবায়েত জানান, বেশিরভাগ প্রত্যক্ষদর্শীই গুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। গাড়িতে আগুন ধরে যাওয়ার দৃশ্যও তারা দেখেছেন। তিনটি মোটরসাইকেলে আট থেকে দশজন যুবক রিয়াজ রহমানের ওপর হামলা চালিয়েছে। এর বেশি কোনো তথ্য দিতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গোয়েন্দা পুলিশের ডিবি) ডিসি শেখ নাজমুল আলম জানান, আমরা গাড়ি চালকের সন্ধান আজও পাইনি। তাকে পেলে ঘটনার বিবরণ জানা যেতো। মামলার অগ্রগতি আনতে গোয়েন্দা সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনাটি আলাদাভাবে ছায়া তদন্ত করছে র্যাব। এ ব্যাপারে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ঘটনার মূল তদন্ত কাজ গোয়েন্দা পুলিশ করছে। তবে হামলাকারীদের শনাক্ত করতে র্যাব কাজ করে যাচ্ছে। তবে বলার মতো কোনো তথ্য তারা এখনো পাওয়া যায়নি।

রিয়াজ রহমানের মেয়ে আমেনা রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এবিষয়ে কথা বলতে তিনি ও তার পরিবার বিব্রত। তাই কথা বলতে অপারগতার কথা জানান তিনি।

জেইউ/বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।