সাইবার হামলার পেছনে উত্তর কোরিয়া?
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের ১৫০টি দেশে চালানো সাইবার হামলার পেছনে কারা দায়ী? এক যোগে বিশ্বের কম্পিউটার সিস্টেমের ওপর এ ধরনের হামলা কারাই বা চালাচ্ছে? অনেকেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন উত্তর কোরিয়ার দিকে।
গত শুক্রবার এক যোগে ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি কম্পিউটার সিস্টেম সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল। একটি স্প্যাম লিঙ্ক ওপেনের সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাকারদের দখলে চলে যায় কম্পিউটার। স্প্যামের মাধ্যমে হ্যাকাররা চাকরির প্রস্তাব, চালান, নিরাপত্তা সতর্কতা ও অন্যান্য ফাইলের নিরাপত্তার প্রস্তাব দেয়।
স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চীন, ইতালি, রাশিয়াসহ বিশ্বের অন্তত ১শ’ দেশে শুক্রবার ওই সাইবার হামলা চালানো হয়। অনেক দেশের স্বাস্থ্য, টেলিকম বা যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতও র্যানসমওয়্যার সাইবার হামলার শিকার হয়।
র্যানসমওয়্যার হচ্ছে এমন এক ধরনের ম্যালওয়ার বা ভাইরাস যা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ব্যবহারকারীকে প্রবেশে বাধা দেয়। অনেক সময় হার্ডডিস্কের অংশ বা ফাইল পাসওয়ার্ড দিয়ে অবোধ্য করে ফেলে। পরে ওই কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ ফেরত দেয়ার জন্য মুক্তিপণ বা অর্থ দাবি করা হয়।
২০১৪ সালে সনি পিকচার্স হ্যাকিংয়ের ঘটনার কথা মনে আছে? লেজারাস গ্রুপ ওই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটিয়েছিল। এছাড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ এর কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে অর্থ লোপাট করা হয়। ওই ঘটনার সঙ্গেও লেজারাস গ্রুপের সম্পৃক্ততা ছিল। এই সংস্থাটি উত্তর কোরিয়ার হয়েই কাজ করে থাকে।
শুক্রবার বিশ্বব্যাপী ওই সাইবার হামলার পর গুগল সিকিউরিটি গবেষক নীল মেহতার একটি অনুসন্ধানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এখন লেজারাস গ্রুপের দিকেই আঙ্গুল তুলছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ওয়ান্নাক্রাই র্যানসমওয়্যার সাইবার হামলায় ব্যবহৃত কোডের সঙ্গে লেজারাসের পূর্ববর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাদৃশ্য পেয়েছেন। তবে শুধুমাত্র এটা থেকেই প্রমাণ হয় না যে শুক্রবারের সাইবার হামলা লেজারাস গ্রুপই চালিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আরো জোরালো প্রমাণ দরকার। তাই এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তদন্ত বিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়ার সিকিউরিটি ফার্ম ক্যাসপারস্কি জানিয়েছে, নীল মেহতার অনুসন্ধান ওয়ান্নাক্রাইয়ের উৎপত্তির বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু এ বিষয়ে আরো অনেক তথ্য প্রয়োজন।
ক্যাসপারস্কির তরফ থেকে আরো জানানো হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা যে এ বিষয়ে কাজ করছেন তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তারা ওয়ান্নাক্রাইয়ের উৎপত্তি এবং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের ঘটনার সঙ্গে লেজারাস গ্রুপের সামান্য সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া গেছে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে আদৌ সম্পর্ক আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে আরো তথ্য প্রমাণ প্রয়োজন।’
টিটিএন/পিআর