জুন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িতে অভিযান চালাবে ফায়ার সার্ভিস
সম্প্রতি শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে নেপাল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। একই সময়ে জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপেছে ভারতসহ বাংলাদেশ। কম্প্রেহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের (সিডিএমপি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় সাড়ে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে প্রায় ৭৮ হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধসে পড়বে। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশের অবকাঠামোগত ক্ষতি হবে প্রায় ৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এছাড়াও ভূমিকম্পে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হবে রাজধানীর ১০টি প্রথম সারির হাসপাতাল, ২৪১টি ক্লিনিক ও ৯০টি স্কুল।
সম্প্রতি রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে এশিয়ার হিমালয়কন্যা নেপাল। তবে একই মাত্রার ভূমিকম্পে কেমন হবে রাজধানী ঢাকার চিত্র?
জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলী আহমেদ খান। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব থাকছে আজ।
আলী আহমেদ খান জানান, ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকার কোন অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এসব নির্ধারণে তৈরি করা হয়েছে একটি হ্যাজার্ড ম্যাপ। ইউনাইটেড ন্যাশনস্ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় এটি তৈরি করেছে বুয়েটসহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক গবেষক। ম্যাপে রাজধানী ঢাকার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহকে লাল রঙ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। ম্যাপে পুরান ঢাকার অংশকে ‘ভেরি হাই রিস্ক জোন’, মিরপুর-বাড্ডা এলাকাকে ‘রিস্ক জোন’ এবং উত্তরাকে ‘লো রিস্ক জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হ্যাজার্ড ম্যাপে বলা হয়েছে, আগামী ৩১ মে`র মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৭২ হাজার বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে হবে। সরে না গেলে জুন মাস থেকে ফায়ার সার্ভিস অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিবে।
আলী আহমদ খান আরো বলেন, নেপালের মতো ৭ দশমিক ৯, রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে মেসাকার (তছনছ) হয়ে যাবে রাজধানী ঢাকা। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাসমূহে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। ধংসস্তূপের কারণে সড়কে চলতে পারবে না ফায়ার সার্ভিস কিংবা উদ্ধারকারী কোনো যান।
এছাড়া তেল ও গ্যাস স্টেশনের আশপাশের ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার এলাকায় আগুন লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলে উদ্ধারকার্যের কূল-কিনারা পাওয়া মুশকিল হবে বলেও জানান তিনি।
ভূমিকম্পে পুরান ঢাকার চিত্র কী দাঁড়াবে
ভূমিকম্পের পর পুরান ঢাকার চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরান ঢাকা। এসব এলাকার সড়কগুলো সরু হওয়ায় ঢুকতে পারবে না কোনো উদ্ধারকারী যানবাহন। বৈদ্যুতিক আর গ্যাস লাইনের কারণে ব্যাহত হবে উদ্ধার কাজ। কী পরিস্থিতি হবে এখন বলে বুঝানো যাবে না। তবে আমরা নিরুপায় হয়ে যাবো। কিছুই করার থাকবে না।
তবে পুরান ঢাকার মতো একই অবস্থা নতুন ঢাকার ভবনগুলোতেও। ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিল্ডিং কোড অমান্য করে গড়ে উঠা ভবনগুলোর। যেটি গুরুত্ব সহকারে পরিপালন করাটা জরুরি।
আলী আহমেদ খান বলেন, বিল্ডিং কোডে ভবনের মূল গেটের সামনে ৩০ ফুট জায়গা খালি রেখে ভবন তৈরির কথা বলা হয়েছে। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অনায়াসে ঢুকে উদ্ধার কাজ চালাতে পারবে। তবে নতুন ঢাকার অধিকাংশ ভবন এসব মানছে না। এমন চলতে থাকলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি দেখা দেবে।’
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের গেটের সামনে ফ্লাইওভার
এদিকে ফুলবাড়িয়ায় ফায়ার সার্ভিসের মূল গেটের সামনে দিয়ে গেছে মেয়র হানিফ (যাত্রাবাড়ি-গুলিস্থান) ফ্লাইওভার। সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সময়ে ফ্লাইওভারটি ভেঙে বন্ধ হতে পারে সদর দফতরের গেট। তখন কীভাবে চলবে উদ্ধারকাজ?
উত্তরে ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক বলেন, উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে পাঠানো হয়েছে। সদর দফতরকে মিরপুরে নেয়ার পরিকল্পনা চলছে। তবে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের পাশ দিয়ে ফ্লাইওভারের রাস্তা করা হতাশাজনক। প্ল্যান তৈরির সময়ে বিষয়টি অবশ্যই আমলে নেয়া উচিৎ ছিল। শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে আমরা এখান থেকে বের হতে পারবো না।
উদ্ধার কাজে দরকার হেলিকপ্টার
নেপালের ক্ষতি আমাদের সতর্ক করেছে। আমাদের প্রস্তুতি নিতে বার্তা দিয়ে গেছে। ভূমিকম্পের পর পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর অনেক স্থানে উদ্ধারকাজ পরিচালনা হেলিকপ্টার ছাড়া অসম্ভব। তবে দেশের প্রধান এই উদ্ধারকারী বাহিনী ফায়ার সার্ভিসের নেই নিজস্ব কোনো হেলিকপ্টার। বিশেষ প্রয়োজনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে রিক্যুইজিশনের মাধ্যমে বিমানবাহিনী থেকে হেলিকপ্টার ধার করা হয়। কিন্তু, এভাবে চলা যায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফায়ার সার্ভিসের হেলিকপ্টার রয়েছে। কিন্তু, আমাদের নেই। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে বিবেচনা করা দরকার।
হতাশ হয়ে ডিজি বললেন, কিছু করার নেই। সব দেশের ফায়ার সার্ভিসেই নিজস্ব হেলিকপ্টার থাকে, আমাদের নেই। তবে রেসকিউ উইংয়ের কাজে হেলিকপ্টার অবশ্যই প্রয়োজন।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি নির্ধারণে হ্যাজার্ড ম্যাপ...
ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পদক্ষেপগুলো থাকছে দ্বিতীয় পর্বে। পড়তে চোখ রাখুন জাগো নিউজে...
## নকশাবহির্ভূত ও ক্রটিপূর্ণ ইমারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ
এআর/আরএস