তিন তালাক নিয়ে বিশেষ শুনানি ভারতে
তিন তালাক প্রথা নিয়ে ভারতের শীর্ষ আদালতে বিশেষ একটি শুনানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ বেঞ্চ এই মামলার বিচার শুরু করেছে। এর চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে ১৮ মে। খবর বিবিসির।
তিন তালাক প্রথা সংবিধানের পরিপন্থী কি না তা নিয়েই এই বিশেষ শুনানি। একরকম নজিরবিহীনভাবে মামলার একটানা শুনানি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীর্ষ আদালত।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চটিতে পাঁচটি ভিন্ন ধর্মের বিচারপতি রয়েছেন। একজন করে মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টান, পার্শি ও হিন্দু ধর্মের বিচারক বিশেষ শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। তবে বিচারপতিদের ধর্মীয় পরিচয় ভারতের আইন ও বিচারব্যবস্থায় আলাদা কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন তালাক প্রথা নিয়ে ভারতে বিতর্ক অনেকদিনের। তবে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি মুসলিম নারী সংগঠন এবং কয়েকজন তালাক প্রাপ্ত মুসলিম নারীদের দায়ের করা মামলাগুলির কারণে তিন তালাক প্রথা নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা বারে বারেই তিন তালাক প্রথা তুলে দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলছেন। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই সব ধর্মের মানুষের জন্য একটি অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রণয়নের পক্ষে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে যে মামলাটি শুরু হয়েছে তার মূল আবেদনকারী মুসলিম উইমেন্স কোয়েস্ট ফর ইকুয়ালিটি ও কুরান সুন্নাত সোসাইটি নামের দুটি সংগঠন এবং বেশ কয়েকজন তালাকপ্রাপ্ত নারী।
কর্নটাকের এক হিন্দু নারী তার পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ পেতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করার পরেই এই মামলার সূত্রপাত হয়।
সেই মামলার শুনানি চলার সময়েই ওই নারীর বিরোধী পক্ষের আইনজীবী মন্তব্য করেছিলেন যে আদালতে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন নিয়ে কথা হচ্ছে কিন্তু মুসলমানদের ধর্মীয় নিয়মে এমন অনেক কিছু রয়েছে যেগুলোও মুসলমান নারীদের অধিকার হরণ করে।
ওই মন্তব্যের পরেই আদালত তিন তালাক নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার কথা বলে। সেই মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয় অন্য পাঁচটি মামলা। সেগুলো তালাক প্রাপ্ত নারীরা দায়ের করেছিলেন। সেসময় ভারত সরকার ও আইন কমিশনকে তিন তালাক প্রথা নিয়ে সমস্ত পক্ষের মতামত সংগ্রহ করতে আদেশ দেয় আদালত।
এ বিষয়ে ব্যাপকভাবে জনমত সংগ্রহ করে আইন কমিশন। আলোচনা চলে নানা মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে। তিন তালাকের পক্ষে-বিপক্ষে দু’ধরণের মতামতই প্রচুর সংখ্যায় জমা পড়েছে।
মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডসহ যারা তিন তালাক প্রথার সমর্থন করেন, তাদের কথায় কোনও আদালতই এই প্রথা নিয়ে বিচার করতে পারে না। নিজস্ব ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার যে অধিকার মুসলমানদের রয়েছে তাতে কোনও আদালতই হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলেও মত দেন তারা।
অন্য দিকে যেসব সংগঠনগুলি তিন তালাকের বিরুদ্ধে তারা বলে থাকেন যে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী যেভাবে তালাক হওয়ার কথা, তার যথেচ্ছ অপব্যবহার করা হয়ে থাকে ভারতে। চিঠি বা ফোন করে অথবা সামাজিক মাধ্যমে তিনবার পর পর তালাক জানিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করে দেওয়া হয় আর এক শ্রেণীর মৌলবি সেগুলোর অনুমোদনও দিয়ে দেন।
চিঠি, ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে তালাক দেওয়া কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়েও ভারতের ইমামদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।
টিটিএন/জেআইএম