নির্বাচনের আগে ভোটারদের দ্বারপ্রান্তে গেছেন ম্যাক্রোঁ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বোধহয় সব হিসাব-নিকেশ উল্টে দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নবনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ভোটারদের ঘরে-ঘরে গিয়েছেন।
এ কাজ করার জন্য তার দল একটি ফার্মের সহায়তা নিয়েছে। তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার প্রায় তিন লাখ ভোটারদের বাড়িতে গিয়েছেন।
সেখানে ভোটারদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন তারা। প্রায় ২৫ হাজার ভোটারের কাছ থেকে ১৫ মিনিট করে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে।
এ সাক্ষাৎকারগুলো দলের কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভোটারদের চাহিদা নির্ণয় করা হয়েছে। এ কারণেই ভোটারদের মনোভাব আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন ম্যাক্রোঁ।
ভোটারদের মাঝে তিনি ইতিবাচক বার্তা দিতে পেরেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ওঁলাদ সরকারের অর্থমন্ত্রীও ছিলেন। তবে এই সরকার ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে অজনপ্রিয় বলেই বিবেচিত। এক সময় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারও ছিলেন ম্যাক্রোঁ।
৩৯ বছর বয়সী ম্যাক্রোঁ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। প্রথমে তিনি মধ্য বাম এবং মধ্য ডানপন্থীদের পরাজিত করেছেন এবং সবশেষে পরাজিত করেছেন উগ্র ডানপন্থীদের।
মধ্য ডানপন্থী প্রার্থী ফ্রাঁসোয়া ফিলো নির্বাচনের লড়াই থেকে আগেই ছিটকে পড়েছিলেন। স্যোশালিস্ট প্রার্থী বেনোট হ্যামনেরও একই অবস্থা হয়েছিল।
ফরাসী বিশ্লেষক মার্ক অলিভার বলেছেন, ‘ম্যাক্রোঁ খুবই সৌভাগ্যবান। কারণ তিনি সম্পূর্ণ একটি অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন।
ম্যাক্রোঁ যে শুধু সৌভাগ্যবান ছিলেন তা নয়। শুধু ভাগ্যের উপর নির্ভর করে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেননি। তিনি বেশ কৌশলীও ছিলেন।
ম্যাক্রোঁ সোশালিস্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সোশালিস্ট পার্টি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এবং ওই দল থেকে নির্বাচন করলে জয়লাভ করা যাবেনা। এজন্য তিনি ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে কী ঘটছে সেদিকে লক্ষ্য রেখেছেন। বিশেষ করে স্পেন এবং ইতালিতে।
স্পেনে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বামপন্থী ‘পোডেমো’ অর্থাৎ ‘আমরা পারি’ এবং ইতালিতে ফাইভ স্টার মুভমেন্ট জনপ্রিয় হয়। ম্যাক্রোঁ জানতেন স্পেন এবং ইতালির মতো কোন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি ফ্রান্সে গড়ে উঠেনি।
সেজন্য ২০১৬ সালে ম্যাক্রোঁ ভিন্ন একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে তোলেন এবং একই সঙ্গে তিনি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওঁলাদ সরকারের মন্ত্রীপদ থেকে পদত্যাগ করেন।
২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বারাক ওবামা যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সে বিষয়টিও অনুসরণ করেছিলেন ম্যাক্রোঁ। তিনি মন্ত্রী থাকার সময় ফ্রান্সের সরকারী ব্যয় কমানোর জন্যও বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ফ্রান্সের জনগণ যে নতুন কিছু পেতে চায় সেদিকে মনোযোগ দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ।
ফ্রান্স জুড়ে যে হতাশা তৈরি হয়েছিল। দেশটিতে ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছেন ম্যাক্রোঁ। তিনি তরুণ এবং প্রাণশক্তিতে ভরপুর। সব কিছু মিলিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করতে পেরেছেন ম্যাক্রোঁ। আর এসব কারণেই তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করেছে ফ্রান্স।
টিটিএন/আরআইপি