নরসিংদীর চরাঞ্চলে বাঙ্গি চাষে বিপ্লব


প্রকাশিত: ১১:০০ এএম, ০৪ মে ২০১৫

গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন প্রাণ অতিষ্ট, খুঁজে ফিরে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস সেই সময় একটু বাঙ্গি প্রাণে এনে দেয় প্রশান্তি। দূর করে শরীরের ক্লান্তি। গ্রীষ্মের অন্যতম ফলগুলোর মধ্যে বাঙ্গি একটি অন্যতম ফল। আর বাঙ্গি চাষে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠছে নরসিংদীর চরাঞ্চল।

চরাঞ্চলের বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও স্বাদে অনন্য হওয়ায় রাজধানীসহ আশপাশের অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। অল্প শ্রম ও সল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই চরাঞ্চলে বাড়ছে বাঙ্গির চাষ। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মৌসুমী কর্মসংস্থানের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামের কৃষকরা চরে ২৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ করে। এখানের উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও রং উজ্জ্বল হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বাঁশগাড়ি ও পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল চর। বিস্তৃর্ণ চরের ধান ও মসলা জাতীয় ফসলের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির উপর ছড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গিগাছের সবুজ লতা। লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারী ক্রেতারা কৃষকদের সঙ্গে দরদাম করছেন। দুই পক্ষের যুক্তিতর্কে চলেছে বেচাকেনা।

মধ্যনগর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে নিজেরা খাওনের জন্য চরে অল্প জমিতে ভাঙ্গি করতাম। কিন্তু গত কয় বছর ধইর্যা বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা চর থাইক্যা বাঙ্গি কিনা শুরু করে। গৃহস্থরা ভালা লাভ পাওয়ায় বাঙ্গির জমি বাড়তেছে। এখনতো চরের অর্ধেক জমিতেই বাঙ্গি চাষ করা হয়।’

বাঙ্গি চাষি ফজলুর রহমান বলেন, ‘বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একবারে করি। রসুনের জন্য সার দেয়ায় বাঙ্গির জন্য আলাদা করে সার লাগেনা। বীজ ও ঔষুধেই যা খরচ। এ বছর এক বিঘা জমিতে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি সব মিলাইয়া ৩৫ হাজার টাকা বেচতে পারমু।’

বাঙ্গি চাষ শুধু কৃষকদের সমৃদ্ধি আনেনি সৃষ্টি হয়েছে মৌসুমী কর্মসংস্থানের। বিশাল চরের বাঙ্গির জমি থেকে নৌকা ঘাটের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। মৌসুমী শ্রমিকরা জমি থেকে বাঙ্গি ঝুঁড়িতে তুলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নৌকা ভর্তি করে। এতে পুরো চরে চোখে পড়ে কৃষক ও শ্রমিকের ব্যাপক কর্মচঞ্চলতা।

ঝুড়িতে বাঙ্গি ভয়ে নেয়া মধ্যনগর গ্রামের আমির হোসেন বলেন, বাঙ্গির পুরা মৌসুমে এই গ্রামের কেউ বইস্যা থাহেনা। সবাই কিছু না কিছু করে। জমি থাইক্যা একটা বাঙ্গি ঘাটে নিলে ১০ টাকা পাই। এতে প্রতিদিন আমাদের ৮ থেকে এক হাজার টাকা মজুরি হয়।

চরে পাইকারী বাঙ্গি বিক্রি হয় শতক হিসেবে। আকার ভেদে প্রতিশত বাঙ্গি ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। জমি থেকে বাঙ্গি কিনছিলেন কুমিল্লার রামচন্দ্রপুরের পাইকারী ফল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও নরসিংদীর মনির মিয়া। তাঁরা জানায়, মধ্য নগরের বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো.আব্বাস উদ্দিন বলেন, নরসিংদীর চরাঞ্চলে বাঙ্গি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙ্গি চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ভাল বীজ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি বিভাগের। পাশাপাশি আগামী বছর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভাল বীজ বিভিন্ন চরের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে।

সঞ্জিত সাহা/এসএস/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।